কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে 'হেলথ নাট্রিশন এন্ড পপুলেশন' প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। তবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকিতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে দেওয়া এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা গ্লোবাল প্র্যাকটিস এর সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ বুশরা বিনতে আলম।সোমবার (১ জুলাই) বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা গ্লোবাল প্র্যাকটিস এর সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ বুশরা বিনতে আলম কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে। ডা: বুশরা কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তাকারী স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সহায়তা প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক এবং হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন প্রকল্প একনেক দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে৷ যা সম্পূর্ণরূপে চালু হতে একটু সময় লাগবে। অতএব, এফডিএমএন -এ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। হোস্ট সম্প্রদায় হিসাবে ক্যাম্প পরিষেবাগুলির সংস্থার কথা বিবেচনা করে, এইচজিএসপি এর উইল অনুদান চুক্তি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওর অধিনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পদায়ন করা চিকিৎসক সহ ১৯৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারির চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৯৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারি চাকুরি হারানোর শঙ্কা ছিলো। এতে হাসপাতালে সেবা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছিলো স্থানীয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই। এর আগে হাসপাতালে ভর্তি রোগী, বর্হিঃ বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশংকা করছেন স্বয়ং হাসপাতালটি চিকিৎসক সহ সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয় এই বিশাল জনবল শূণ্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত আইসিইউ, সিসিইউ সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিঘ্ন ঘটতে পারে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে।কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবার সরকারি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। এটি জেলার ২৫ লাখ মানুষের পাশাপাশি ২০১৭ সালের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়রত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সেবা প্রদান করে আসছে। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত মোট অর্থের ২৫ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যানে ব্যয় করার আদেশ রয়েছে। হাসপাতালটিতে জেলার স্থায়ী জনগোষ্ঠি সহ বিশাল অংকের রোহিঙ্গা চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালটি আধুনিকায়ন, চিকিৎসা সেবার উন্নত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যানে ব্যয়ের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নানা প্রকল্প শুরু করা হয়।
বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও সংস্থার অধিনে প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালের সেবা পরিধি বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ প্রদান করা হয়।কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া সর্বশেষ ১ জুনের তথ্য বলছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যানে ব্যয়ের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬ টি সংস্থার অধিনে ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির পদায়ন রয়েছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। এই ৬ টি সংস্থা হল, আইওএম, ইউনিসেফ, ইউএসএফপিএ, শেড।
যেখানে আইসিইউ ও সিসিইউ পরিচালনার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ মোট ৪৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন নার্স ও মিডওয়াইফ ১৩ জন, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ১ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস ৫ জন, ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস ২ জন, রিডওলজি টেকনোলজিস ২ জন, লাইফ অপারেটর ১ জন, অ্যাম্বুলেন্স চালক ১ জন, বৈদ্যুতিক কারিগর ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৩৮ জন, ওয়ার্ড মাস্টার ১ জন, আনসার সদস্য ১৫ জন, নিরাপত্তা কর্মী ৭ জন, ওয়ার্ড বয়/আয়া ২০ জন, অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) সহযোগী ৬ জন, সিনিয়র ফার্মাসিস্ট ১ জন, ল্যাব সহকারি ২ জন, স্টোর কিপার ১ জন, ডাটা অপারেটর ১ জন, আইএমসআই বিশেষজ্ঞ ২ জন, ক্লিনিক্যাল বিশেষজ্ঞ ৪ জন, সমন্বয়কারী ১ জন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ১ জন, টিকেট বিভাগে ৫ জন, ম্যানুয়ার ওর্য়াকার ১০ জন, কেস ওর্য়াকার ২ জন, ইডি সহযোগী ৮ জন, স্যানিটারি কর্মী ১ জন।এর বিপরীতে ২৬ জুন বুধবার প্রাপ্ত তথ্য বলছে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সরকারি মঞ্জুরিকৃত ৩২৮টি পদের মধ্যে ৭৬টি শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ৬৮টি চিকিৎসকের পদে কর্মরত রয়েছেন ৫২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্সের ১৮০টি পদে কর্মরত রয়েছেন ১৫৭ জন, তৃতীয় শ্রেণীর ৩৬ পদে ৩১ জন এবং চতুর্থ শ্রেণীর ৪৪ পদে ১২ জন কর্মরত রয়েছেন।