কোথাও কামকাজ নাই। ঘরে অল্প চাল ও ডাল ছিল। সেটাও ফুরিয়ে যাচ্ছে। চার দিনের মধ্যে কেউ কোনো খোঁজ নিল না, রিলিফ (ত্রাণ) দিল না। দুলাল মিয়া, বন্যাকবলিত ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী এলাকার বাসিন্দা

বন্যায় সরকারি হিসাবেই জামালপুরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। এক সপ্তাহ ধরে পাঁচটি উপজেলার ১৫৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত। অথচ এখনো বেশির ভাগ গ্রামে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। বন্যার্তদের অনেকে খেয়ে না–খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। বানভাসিদের অভিযোগ, বেশির ভাগ গ্রামে তারা গত সাত দিনের মধ্যে কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি লোকজনকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখেনি। কিন্তু জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, প্রতিদিনই বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। 

তবে সরেজমিনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামপুর উপজেলায় এমন কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি। অবশ্য দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের অনেকে ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বন্যার্ত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ঘরবাড়িতে পানি এবং রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার পরও কোথাও কোনো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে না। অন্যান্যবারের মতো হয়তো এবার পানি বৃদ্ধি পায়নি। তবে বেশির ভাগ মানুষ ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। কারণ, ঘরবাড়ির চারপাশে পানি। কোথাও বের হওয়া যায় না। কেউ কোনো বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনবে, সেই উপায় নেই। কারণ, নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়া যায় না। ফলে ঘরে থাকা বেশির ভাগ খাদ্যপণ্য ফুরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ বানভাসি ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।


জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তিনি ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য নেওয়ার পরামর্শ দেন। বন্যায় জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ইসলামপুর। এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটির ৪০ গ্রামের বেশির ভাগ অংশ বন্যাকবলিত। ২২ হাজার ৫০০ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জন্য ৯০ মেট্রিক টন চাল, ১ লাখ টাকা ও ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


বন্যার্তদের জন্য ওই উপজেলায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ না হওয়া প্রসঙ্গে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান বলেন, এই পর্যন্ত ওই এলাকায় ২১ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাই পাবে। কয়েক দিন ধরে ইসলামপুর উপজেলার বলিয়াদহ, ঢেংগারগড়, সুরেরপাড়া, আমতলি, খলিশাকুঁড়ি, চিনাডুলী, পূর্ব বামনা, পশ্চিম বামনা, বামনা, শিংভাঙা, হারগিড়া, কড়ইতার, দেলীরপাড়, দেওয়ানপাড়া, নতুনপাড়া ঘুরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।


পাথর্শী এলাকার দুলাল মিয়া বলেন, ‘দিনমজুরি করে টেনেটুনে সংসার চলে। পাঁচ সদস্যের সংসার। চার দিন ধরে পানি উঠছে। কোথাও কামকাজ নাই। ঘরে অল্প চাল ও ডাল ছিল। সেটাও ফুরিয়ে যাচ্ছে। চার দিনের মধ্যে কেউ কোনো খোঁজ নিল না, রিলিফ (ত্রাণ) দিল না।’


জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পাঁচটি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের ১৫৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ হাজার ৭০১টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৭৬২ জন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ত্রাণসহায়তা হিসেবে ৩৫০ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ টাকা ও ৪ হাজার শুকনো প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের ৫৮ গ্রামের বেশির ভাগ অংশ বন্যাকবলিত। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬৩৮। ৯০ মেট্রিক টন চাল, ১ লাখ টাকা ও ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ১৭ মেট্রিক টন চাল ও ৬৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।