কুষ্টিয়ার একটি দোকানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, সেখানে আছে সুইমিং পুল, গলফ খেলার মাঠ, হেলিপ্যাডসহ ফাইভ স্টার মানের গেস্ট হাউজ

কুষ্টিয়ার একটি দোকানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, সেখানে আছে সুইমিং পুল, গলফ খেলার মাঠ, হেলিপ্যাডসহ ফাইভ স্টার মানের গেস্ট হাউজ। একশ বিঘারও বেশি জমির উপর নির্মিত কথিত এই মাল্টিন্যাশনাল দোকানে তামাক প্রক্রিয়াজাতের কাজ করেন ৩০০ নারীসহ মোট ৭০০ শ্রমিক। দোকানটির মালিক বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ।
শত বিঘা জমির ওপর নির্মিত কারখানায় তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করে সাত থেকে আটশ শ্রমিক। সেই তামাক পাতা দিয়ে সিগারেট তৈরির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করছে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ। অথচ সেই কারখানাগুলোকে দোকান হিসেবে দেখিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিটি। অভিযোগ আছে শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন কারখানাকে দোকান হিসেবে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।ছিল রুমাল হয়ে গেল বিড়াল। সুকুমার রায়ের বিখ্যাত হযবরল রচনার মতোই, ছিল কারখানা হয়ে গেল দোকান। হ্যা গল্প নয়, সত্যি, সাত-আটশ’ শ্রমিক যে তামাক প্রসেসিং কারখানাগুলোতে কাজ করে সেগুলো সাধারণ দোকান দেখিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে 'ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো'। অভিযোগ আছে, সংবাদ প্রকাশের পর জালিয়াতির মাধ্যমে কারখানাকে দোকানের লাইসেন্স দিতে কুষ্টিয়ার কর্মকর্তাদের বাধ্য করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কয়েকজন কর্মকর্তা।
কাগজপত্রে মুদি দোকানের লাইসেন্স নেয়া এই কারখানাটি আসলে কুষ্টিয়ার মিরপুর রোডে অবস্থিত বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর তামাক প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা।সরকারের অনুমোদনহীন বিএটির এই কারখানায় শ্রম আইনের লংঘন নিয়ে গেলো বছরের নভেম্বরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে একটি টেলিভিশন। এরপরই তড়িঘড়ি করে কারখানার তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে দোকান হিসেবে লাইসেন্সের আবেদন করেন বিএটির কোম্পানি সেক্রেটারী সৈয়দ আফজাল হোসেন। 
সব কিছু জেনেও চলতি বছরের ১২ফেব্রুয়ারি২০২৫ইংঃ ওই কারখানাকে দোকান হিসেবে লাইসেন্স দেন কুষ্টিয়ার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। শ্রম আইনে কারখানার সংজ্ঞা অনুযায়ী পাঁচজনের বেশি শ্রমিক কর্মরত থেকে কোন উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখলে সেটি কারখানা হিসেবে চিহ্নিত হবে।কুষ্টিয়ার মিরপুরের মতোই শতাধিক বিঘার উপর প্রতিষ্ঠিত বিএটির চেচুয়া লিফ ডিপোতে তামাক প্রক্রিয়ার কাজ করেন ৬শ নারীসহ ১ হাজার ৫০ জন শ্রমিক। বিশাল এই কারখানাকেও জালিয়াতির মাধ্যমে দোকান দেখিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে বিএটি। ভেড়ামারা উপজেলায় ৭৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত আল্লারদর্গা লীফ ডিপো এক এবং পাঁচ শতাধিক কর্মীর আল্লার দর্গা লীফ ডিপো দুইসহ; নামের কারখানাটিরও তথ্য গোপন করে দোকানের নামে লাইসেন্স নেয়া হয়েছে।  এসব কারখানায় মৌসুমি শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতিসহ শ্রম আইনের ১০৬টি ধারার গুরুত্বর লংঘনের প্রমাণ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে কিভাবে দোকানের লাইসেন্স দিয়েছে কলকারখানা অধিদপ্তর? তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।এদিকে, কুষ্টিয়ায় বিএটি’র কার্যক্রম আইন মেনে এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেয়া লাইসেন্স অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে বলে লিখিত বক্তব্য জনসংযোগ কোম্পানির মাধ্যমে দিয়েছে বিএটি। যদিও শ্রম আইন লংঘন ও কারখানাকে দোকান হিসেবে কেন লাইসেন্স নেয়া হলো সে বিষয় কোনো উত্তর দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। 
এমনকি সরকার ও শ্রমিক প্রতিনিধিসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে ২২ দফা বাস্তবায়নের লিখিত অঙ্গিকার করলেও, ৫ মাসেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি বিএটি। এসব বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিতে রাজী না হলেও টেলিফোনে বিএটি প্রতিদিন অনেকটা রাজস্ব দেয় বলে সাফাই গেয়েছেন শ্রম সচিব এএইচ এম শফিকুজ্জামান।