সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া জেলার একজন প্রবীণ সাংবাদিক মোঃ ইব্রাহিম খলিল

সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া জেলার একজন প্রবীণ সাংবাদিক মোঃ ইব্রাহিম খলিল। তিনি আমাদের মাঝে আজও বেঁচে রয়েছেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানায় রয়েছে যে, আসলে তিনি কেমন সাংবাদিক ছিলেন। এবিষয়ে সরাসরি সাংবাদিক মোঃ ইব্রাহিম খলিলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎ এর সময় তিনি শুধু সাংবাদিকতার জীবনই নয়, তুলে ধরেন তার জীবনের শুর থেকে নানান কথা। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি মোঃ ইব্রাহিম খলিল। ১৯৮৭ সালে আমি যখন কুষ্টিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা শেষ করলাম, তখন আমার বন্ধু আতিক আল হেলাল কে বললাম, তুই তো সাংবাদিক, সাংবাদিতা শিখায় দে, সে আমাকে কুষ্টিয়ার শহরের বিখ্যাত সাংবাদিক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরীর নিকট নিয়ে গেল। উনার পত্রিকার নাম সাপ্তাহিক ইস্পাত। সে সময় শুনতাম, সাপ্তাহিক ইস্পাতের নাম শুনলে আনেকেই ভয়ে কেঁপে ওঠে, অনেকেই এটা কে ভয় পায়, কেন ভয় পায়, পরে টের পেয়েছিলাম। উনি আমাকে বললেন, এটা একটা মহান পেশা। তুমিতো মাদ্রাসার ছাত্র, তোমার দ্বারা সম্ভব। তুমি মন দিয়ে কাজ কর। সব শিখিয়ে দেব। তারপর উনি আমাকে প্রতিনিয়ত কাজ দিতেন।। আমি মন দিয়ে সেসব কাজগুলো করতাম। উনি আমাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল, কুষ্টিয়া থানা, কুষ্টিয়া পৌর বাজার, বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতেন। ভালো লাগলো আমার। আমার খুব পছন্দ হলো এই কাজগুলো। আস্তে আস্তে আমাকে চিনে গেল অনেকেই। যখন আমাকে কেউ সাংবাদিক সাহেব বলে ডাকতো,লজ্জাও লাগতো। মাঝে মাঝে অনেকেই আমাকে শ্রদ্ধার চোখে তাকা তো। অনেকেই আমাকে সম্মান দিত, বলতোএই যে সাংবাদিক সাহেব, এই সমস্যাটা একটু লেখেন, সমস্যাটা একটু তুলে ধরেন আপনাদের পেপারে। আপনাদের পেপারের তো সুনাম আছে। আপনাদের পেপার কে সবাই ভয় পায়। প্রশাসনের লোক খুবই ভয় পাই। আমি জিজ্ঞেস করতাম, কেন ভয় পায়। যেহেতু আপনারা সত্য তুলে ধরেন। আপনাদের পেপারে কোন মিথ্যা খবর থাকে না একদিনের একটি স্মৃতি খুব মনে পড়ে আজও। কুষ্টিয়া পৌরসভা বাজারে একজন জোর করে জায়গা দখল করে নেয়, আমি সেটা রিপোর্ট সম্পাদক সাহেবের কাছে জমা দিই।
আমাদের প্রেসের অপারেটর শামসুল ভাই বলে যে, এই ছেলে আমার আত্মীয়, তুমি আমার আত্মীয়র বিরুদ্ধে নিউজ লিখলে, আমি বললাম যে, আপনার আত্মীয় হলেও নিউজ ছাপা হবে। এ থেকে আমি বিরত থাকবো না। শামসুল ভাই সম্পাদক সাহেবকে জানালেন। 
নিউজটা যাতে বের না হয়। আমার সম্পাদক সাহেবও তড়িৎ জোর গলায় বললেন যে, তোর আত্মীয় তাই কি হয়েছে, সে যদি অপরাধী হয়, অন্যায় করে থাকে, অবশ্যই নিউজ বের হবে। আরেক দিনের কথা কোনদিনই ভুলে যাবো না। সারা জীবন মনে থাকবে। কুষ্টিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন গামা সাহেব, বদরুদ্দোজা গামা সাহেব। একদিন আমার সম্পাদক বললেন, তুমি কুষ্টিয়া পৌরসভাতে যাবে। বলবে যে, কুষ্টিয়া শহরে কত কুকুর আছে, কুকুরের হিসাব দিতে হবে। কুকুরের ব্যাপারে আপনারা কি অ্যাকশন নিয়েছেন। কুকুর জনগণকে হামলা করছে, ক্ষয়ক্ষতি করছে, এ কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কুকুরের ওষুধ আছে কিনা, এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন। গামা সাহেব আমাকে বললেন যে , তোমার পরিচয় কি। আমি সাপ্তাহিক ইস্পাতের কোন সাংবাদিকের সাথে কথা বলবো না। সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকা কে আমি পছন্দ করি না । আমি যথারীতি, আমার সম্পাদক সাহেবকে ঘটনাটা খুলে বললাম। পরের দিন আমাদের ইস্পাত পত্রিকায় ছাপা হল , কুষ্টিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান সাহেব, সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকার উপর গোসসা করেছেন।গামা চেয়ারম্যান আমাকে খুঁজে বের করলেন।আমি তো মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম। উনি খুব আদর করে আমাকে উনার পাশে বসালেন। তোমার সম্পাদক সাহেবকে সব কথা বলে দিয়েছো। সেই থেকে উনার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। উনি যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাকে উনার সব কাজে আমাকে ডাকতেন। আমাকে খুবই সেনেহের চোখে দেখতেন। ভালোবাসতেন। উনার দ্বারা অনেক উপকার হয়েছে আমার জীবনে। এই মানুষটার জন্য আমি সব সময় দোয়া করি। ইস্পাত সংবাদদাতা সমিতি ছিল। সমিতির নেতা ছিলেন সাংবাদিক বকুল চৌধুরী, হালিম ভাই, মুকুল খসরু ভাই। সমিতির অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মিঠু চৌধুরী। উনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিতে সাপ্তাহিক ইস্পাতের প্রকাশনা উৎসবে, বার্ষিক অনুষ্ঠানে এ অনুষ্ঠানে আমাকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে সর্বোচ্চ সংবাদ সরবরাহ করেছিলাম। এজন্য আমাকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে তারিকুল হক তারিক,নুরুল কাদের ওরাও পুরস্কার পেয়েছিল। এরপর সাপ্তাহিক গ্রামের ডাক সম্পাদক আলমগীর সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল। উনি বললেন যে তুমি নাকি অনেক সংবাদ দিতে পারো। আমার পত্রিকায় কাজ করতে পারো। উনি সুলভ পে্রসে এসে বসতেন। এরপর সাপ্তাহিক দেশব্্রতী সম্পাদক এডভোকেট লিয়াকত আলী সাহেবের সাথে পরিচয় হলো। উনি ওনার পত্রিকাতে কাজ করার অফার দিলেন। এভাবে সাংবাদিকতার শুরুর দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। আমাদের ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব মাসিক গাজ্জালী পত্রিকা বের করা শুরু করলেন। সেই সালটা যতদূর মনে পড়ে ১৯৮৬, ১৯৮৭,১৯৮৮ সাল হবে। অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার স্যার আমাকে বিআরবি কোম্পানির মালিক মজনু সাহেব এর লাভলী ম্যানশন বাড়িতে নিয়ে গেলেন। স্যার কে দেখে মজনু সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন , স্যার কেন এত কষ্ট করে আমার বাড়িতে আসলেন। আমাকে খবর দিলেই পারতেন, আমিআপনার সাথে দেখা করতাম। উনি বললেন, আমি ইমাম গাজ্জালী সংগঠনের উপদেষ্টা। ওরা মাসিক গাজ্জালী পত্রিকা বের করে । ওদের বিজ্ঞাপন দিয়ে তুমি একটু সহযোগিতা করো। উনি কাচুমাচু করে বললেন, অসুবিধা নেই স্যার, আপনি যখন ওদের সাথে আছেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে সাহায্য করবো। সেই থেকে শুরু বিআরবি কোম্পানিতে যাতায়াত। সেইকালে ৫০০ টাকার বিজ্ঞাপন দিতেন। সেই ৫০০ টাকা পেয়ে কি খুশি খুশি লাগতো, তা কাউকে বুঝাতে পারবো না। তখনকার ৫০০ টাকার অনেক দাম ছিল। মজনু সাহেবের সাথে অনেক ভাব হয়ে গেল। উনি আমাদের জীবনে অনেক সাহায্য করেছেন। এই জীবনে উনার ঋণ শোধ করতে পারবো না।উনাকে মহান আল্লাহতালা ভালো করুন, সম্মান এর আসন বাড়িয়ে দিন, এই কামনা করছি। এরপর ১৯৯০ সাল। কুষ্টিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৯ সালে আলিম পাস করার পর, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ১৯৯০ সালে এসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হলাম। কলেজে ভর্তি হবার পরে ইসলামী ছাত্র মজলিসে যোগদান করে ছাত্র রাজনীতি শুরু করলাম। সেই সাথে দৈনিক বাংলাদেশ বার্তায় গিয়ে সংবাদদাতা,কুষ্টিয়া শহর প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করলাম। এই পত্রিকা অফিসে অনেক স্মৃতি আছে। যাদের সাথে দেখা হয়েছিল তাদের নামটা বলছি আতিক আল হেলাল, ফুয়াদ ভাই,বুলবুল ভাই,সুরুজ ভাই, লাকি মিজান ভাই, সনৎ নন্দী, ফিরোজ ভাই , আরো অনেকের সাথে। আজকের দিনে অনেকের নামই ভুলে গেছি। মনে পড়ে তাদের কথাগুলো, নামগুলো মনে নেই। প্রতি রোজার মাসে রোজার উপর লেখা দিতাম। আমার লেখা বের হলে খুবই ভালো লাগতো। মাঝে সাঝে ছড়া , কবিতা দিতাম। এই পত্রিকার অফিসে কোন ঝামেলার মধ্যে পড়ি নাই। এই পত্রিকায় থাকাকালীন ডাক্তার আনিছুর রহমান সাহেব, সালেহিন স্যার, বিজ্ঞাপন ও সংবাদ দিয়েছিলেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনেক নিউজ করেছি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। কলেজের অধ্যক্ষ স্যার, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের, বিশেষ করে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তহুর আহমেদ হেলালি স্যার, তিনি মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি ছিলেন। মসজিদ মিশনের বিভিন্ন সংবাদ আমাকে দিয়ে করাতেন। টাকা পয়সা তখন ভালো ইনকাম হতো। যে যা দিত বিশেষ করে হেলালি স্যার অনেক টাকা দিতেন। যেসব ছাত্র নেতারা, কর্মচারীরা, শিক্ষকগন,আমি পত্রিকার সাথে জড়িত, আমার দিকে শ্রদ্ধার চোখে তাকাতো। কোন একদিন বিকেলের দিকে বাংলাদেশ বার্তা পত্রিকার দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা মস্তান শিশু পার্কের কাছে আমার পথ রোধ করে। ছুরি বের করে আমার পেটে আঘাত করতে যায়, আমার বাল্যকালের বন্ধু বাবু বর্তমানে ফল ব্যবসায়ী আমাকে চিনতে পেরে সেই মস্তানকে বলে, এই তুই কাকে আঘাত করছিস এটা আমার বন্ধু। সেই ছেলেটা বলে যে, এ শিবিরের মাল। আমার বন্ধু বলে যে, ও ছাত্র মজলিস করে। সে শিবির না। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যাই। বাবুর সাথে বর্তমানে হাসপাতাল রোডে দেখা হলে বলে যে, সেদিন যদি আমি ছেলেকে বাধা না দিতাম তাহলে তোর পেটে ভোজালি ঢুকাই দিত। আমি বলি যে, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। রাখে আল্লাহ মারে কে। ১৯৯১ সাল থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমাদের ঈদগা পাড়ারএম এ শামীম আরজু ভাই কুষ্টিয়া শহর বিএনপির নেতা ছিলেন। একদিন আমাকে সিভিল সার্জনের গাড়িতে করে বিমান মন্ত্রী আব্দুল মান্নানের ভেড়ামারা সফরে নিয়ে যান। মন্ত্রীর গাড়ির পিছনে যেতে কি মজা লাগে টের পেয়েছিলাম বেশ। ভেড়ামারা জিকে রেস্ট হাউজে রাজকীয় খাবার খেয়েছিলাম। একজন মন্ত্রী সাহেবের সম্মান কি। কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন ভাই ডিসি, এস পি , মন্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরতেন। সমাধান চাইতেন। খুব ভালো লাগতো, সোহরাব ভাইয়ের বক্তব্যগুলো। খুব খুশি হতাম। সেই দিনগুলি খুব রঙিন মনে হতো। এরপর ১৯৯৫ পরে আমি দৈনিক আন্দোলন বাজারে যোগদান করি। মিঠু ভাই আমাকে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করে। তখন ডাবলু ভাই খুব পরিশ্রম করতো। আন্দোলন বাজারে রাতেই খাওয়া-দাওয়া হতো। খুব হইচই আনন্দ হত। অনেক মজার সময় সেখানে কেটেছে। অনেক ডিসি আন্দোলন বাজারে এসে রাতের বেলা সম্পাদক সাহেবের সাথে গোপন মিটিং করতেন। থানার ওসিরা সিগারেট অফার করতেন। আমি নিউজ এডিটর থাকায় অনেকে নিউজ ছাপানোর জন্য তদবির করতো। খুব খোসা মত করত। মনে আছে বিএনপি'র কুতুব ভাই পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন। প্রতিদিন রাতে আমাদের বড় ভাই শিহাব ভাই ঈদগাহপাড়া এসে কুতুব ভাইয়ের নিউজ ছাপানোর জন্য অনুরোধ জানাতেন।সেই সময় অনেকেই আমার হাতে কাজ শিখেছে। আজ যারা অনেকেই বড় বড় পজিশনে আছে , বড় বড় পত্রিকায় আছে, প্রথম শিক্ষাটা তারা আমার কাছ থেকেই নিয়েছিল। যদিও আজ অনেকেই তা স্বীকার করে না। অনেকেই চেপে যায়। আগের মত সম্মান দেখায় না। যতদূর মনে পড়ে ১৯৯৬ সালে আমি লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সেই সময় দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব কুষ্টিয়া তে ওয়াজ মাহফিলে আসেন। আমি ওয়াজ মাহফিলের নিউজটা খুব গুরুত্বসহকারে ছেপে ছিলাম। পরেরদিন সম্পাদক সাহেব আমার টেবিলের সামনে এসে বলেন, রাজাকারের নিউজটা ভালোই ছেপে দিলে। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট টা ছাপলে না কেন। বললেন আজ থেকে তোমার চাকরি নেই। তোমার ছুটি। আন্দোলন বাজারে আমরা নিয়মিতভাবে বেতন পেতাম। অনেক সম্মান পেয়েছিলাম। অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। সাংবাদিকতা কাকে বলে মিঠু ভাই আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন।আমার পরে রহমত রিজভী বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। মিঠু ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা ভালই ছিল। এরপর দৈনিক বজ্রপাত পত্রিকা বের করলেন শিহাব ভাই, সোহরাবভাই। সালটা ছিল ১৯৯৭,৯৮ সালে। সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক ভাই। উনার সাথে বাংলাদেশ বার্তা থেকেই পরিচয় ছিল। সেখানে নুরুন্নবী বাবু, হাসান বেলাল, জাহিদ হাসান,লাকি মিজান অনেকেই আমার সাথে কাজ করতো । মনে আছে ১৯৯৯ সালে বিয়ে করলাম। অনেক রাতে ঢাকার গাড়িতে ভেড়ামারা গিয়ে নামতাম। সেখান থেকে আল্লার দগা।এভাবে দিনগুলি কেটে যায়। অনেক স্মৃতি, অনেক রহস্য, অনেক আনন্দ।
১৯৯৬ সালে শিল্পপতি আনোয়ার ইউসুফ রাজনীতিতে এলে তাদের পরিবার থেকে দৈনিক কুষ্টিয়া নামে একটা পত্রিকা বের হয়। সেখানে সম্পাদক ছিলেন মোতালেব হোসেন সাহেব। আজকের একজন নামকরা সাংবাদিক ও সম্পাদক ডক্টর আমানুর রহমান আমান এই পত্রিকার একজন সাংবাদিক হিসাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে লিখতেন। কালের পরিক্রমায় তিনি আজ এই পত্রিকার মালিক, সম্পাদক ও প্রকাশক । শুরুর সময় থেকেই তার সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি এখন আমাদের ইমাম গাজ্জালী সংস্থার সম্মানিত উপদেষ্টা হিসাবে সহযোগিতা করে থাকেন ।দৈনিক কুষ্টিয়া পত্রিকার একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল। বার্তা সম্পাদক ছিলেন মরহুম ফিরোজ চাচা। আমার সাথে তার বাংলাদেশ বার্তা থেকে পরিচয় হয়েছিল।কোন একদিন দৈনিক কুষ্টিয়ায় ছাপা হল কে এই ইব্রাহিম খলিল। এই সংবাদে কিছুটা আমার বিরুদ্ধে লেখা হলো। আমার সাগরেদ কবি নজরুল ইস্তিয়াকের ভাই সাইদুল আমাকে সাথে নিয়ে পত্রিকা অফিসে গিয়ে, ফিরোজ সাহেবকে ধমক দিল, আমার গুরুর বিরুদ্ধে কেন নিউজ করেছেন। জবাব চাই। ফিরোজ সাহেব ভয় পেয়ে গেলেন । বললেন আমি নিউজটা করি নাই। আমাকে ভুল বুঝবেন না। এরপর থেকে ফিরোজ সাহেবের সাথে দেখা হলে তিনি আমাকে ফাদার বলতেন। কেন বলতেন জানিনা। হয়তো তার পিতার নামও ইব্রাহিম ছিল। পত্রিকায় কাজ করতে গিয়ে কাউকে কখনো ভয় দেখায়নি। তিনবার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তিনজনকে কে ভয় দেখিয়েছিলাম। বড়বাজারের এক কাঁসা পিতলের ব্যবসায়ীকে, কুষ্টিয়া পলিটেকনিক এর এক শিক্ষককে, কুষ্টিয়া টিবি ক্লিনিক এর এক কর্মচারীকে। আমার জাফর ভাইয়ের চাচা শ্বশুর সাংবাদিক আব্দুল বারী দৈনিক দেশ তথ্য পত্রিকা বের করেছিলেন। সেখানে অনেকদিন কাজ করেছিলাম। পরবর্তীতে পত্রিকার দায়িত্ব নিলেন সাংবাদিক হালিমুজ্জামান ভাই। হালিমুজ্জামান ভাইকে নিউজ দিতে গেলে উনি শুধু সিগারেট চাইতেন। খুব রাগ হতো। আমি বলতাম যে আমি ধূমপান বিরোধী লোক । দানবীর অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন সাহেবের আত্মীয় গাজী মাহবুব ভাই দৈনিক আজকের আলো পত্রিকা বের করেন। এই মানুষটাকে আমার পছন্দ হয়েছিল। কোন ঝামেলার সাথে থাকতে চান না। খুব নিরিবিলি একটা লোক। আমাদের কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি হয়েছিলেন। সহযোগিতার মানুষিকতা ওনার মধ্যে দেখেছি। আর একটা কথা খুব মনে পড়ে গেল। জামাতে ইসলামের কুষ্টিয়া জেলা আমির ছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াহেদ ভাই। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে উনার ছবি পত্রিকাতে ছেপে দিতাম।কমপক্ষে বিজ্ঞাপনে পাঁচশত টাকা দিতেন, মাঝে মাঝে এক হাজার টাকাও পেতাম ।জামাতের অনেক নিউজ করেছি। উনারা টাকা খরচ করেন। উনারা কখনো কৃপণতা করেন না। কুষ্টিয়া শহরের বিজ্ঞাপন কালেকশন করে অনেক পত্রিকায় দিতাম। ভালোই কমিশন পেতাম। কম্পিউটারে কম্পোজ করে ট্রেসিং এর মাধ্যমে যখন পত্রিকা বের হয়,তার আগের দিনগুলোতেএকটা নিউজ হাতে লিখে দশটা ফটোকপি করে রিক্সা ভাড়া নিয়ে পত্রিকা অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসতাম। একটা নিউজে পাঁচশ, ৪০০-৩০০ টাকা পেতাম। কেউ বেতন দিত না। অনেক কষ্ট করেছি। সেসব দিনের কথা খুবই মনে পড়ে। আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিউজ পিরাই পাঠাতে হতো। সার খুব খুশি হত। আমাদের সংগঠনের নিউজগুলো নিজেই দায়িত্ব নিয়ে করতাম। সকলকে পত্রিকা পৌঁছে দিই।১৯৯৯ সালে বিয়ের পর ২০০০, ২০০১, ২০০২ সাল পর্যন্ত আল্লাহর দরগা বনানী কোম্পানিতে চাকরি করতাম। এই কিছুদিন পত্রিকার। সাথে আমার সম্পর্ক রাখতে পারি নাই। ফিরে এসে আবার কাজ শুরু করলাম। তখন বিএনপির সময় কলেজ শিক্ষক সমিতির সব নিউজগুলো আমিই করেছিলাম। শিক্ষকদের সেই আন্দোলনের কথাগুলো মনে আছে। এ পত্রিকা থেকে ও পত্রিকা সব পত্রিকাতেই আমার যাতায়াত ছিল। মনে আছে সে সময় কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি ছিলেন সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক ভাই। তিনি প্রায় দিনই আমাকে সাথে নিয়ে ডিসি অফিস, এসপি অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, কে ডি এস যেতাম। আব্দুর রাজ্জাক ভাইকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে যেত, তাকে সালাম দিত, তাকে সম্মান দেখাতো। খুব ভালো লাগতো। সেইসব দিনগুলোর কথা খুব ভালোভাবে মনে আছে। তিনি আমাদের সবাইকে নিয়ে নাটোর গণভবনে পিকনিক নিয়ে গেলেন । সম্ভবত সালটা ২০০৫ সাল। তখন আমাদের কুষ্টিয়াতে সাংবাদিকদের মধ্যে মোটামুটি একটা ঐক্য বজায় ছিল। এত হানাহানি, কামড়াকামড়ি ছিলনা। সাংবাদিকদের মান-সম্মান বজায় ছিল। হঠাৎ কিসের মধ্যে কি হয়ে গেল। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের দখল নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হল। যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। যাক সেসব নিয়ে কিছু ঘাটতে চাই না। আবার কে খুশি হবে, কে অসন্তুষ্ট হবে জানিনা। এসব ঘটনা চেপে গেলাম। ২০০৬ সালে ঢাকার একটা এনজিওর প্রতিনিধি হিসেবে রাঙ্গামাটি ও মেহেরপুর মুজিবনগর সফর করলাম। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হওয়া দরকার একটা রিসার্চ করলাম। ঢাকায় ফিরে সেটার রিপোর্ট প্রদান করলাম। ২০০৬ সালে ঢাকা বাংলাবাজারে দুটি গ্রামার লেখার কাজে গেলাম। বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার লিখে কিছু টাকা পেলাম। কুষ্টিয়া ফিরে এসে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরী প্রজেক্ট এর যোগদান করলাম। সেই থেকে লাইবেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।২০১১ সালে ঢাকার দৈনিক মাতৃভাষা পত্রিকায় যোগদান করি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে। বিআরবি কোম্পানি ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন ঢাকাতে পাঠাতে লাগলাম। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে কয়েকবার সভাপতি ছিলেন রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব,এরপরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি গঠন করলে সহ-সভাপতি হিসেবে দুইবার নির্বাচন করেছি। সেখানে আরেকজন তরুণ প্রজন্মের অহংকার সাংবাদিক হাফেজ মাওলানা মুফতী সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ এর সঙ্গে একসাথে নির্বাচন করলাম ১বার একই প্যানেলে। তিনি প্রার্থী হলেন নির্বাহী সদস্য আর আমি হলাম সহ-সভাপতি প্রার্থী। আমরা দুইজন ইসলামিক মাইন্ডের হওয়াতে আমাদের নির্বাচন করতে বেগ পেতে হয়েছে অনেকবেশি। তবে ২য় বার নির্বাচনে মুফতী সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ তার চৌকস চিন্তাধারা কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকতায় ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন এবং বিপুল ভোটে প্রেসক্লাবে ধর্মীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন। আমি এখন মুরুব্বী বয়স হওয়াতে সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ আমাকে নিউজ প্রকাশে অনেক সাহায্য করেন এবং সর্বোপরি প্রবীণ হিসেবে যথেষ্ট সম্মানও করেন। তিনি একাধারে একজন ইসলামি স্কলার হিসেবে ওয়াজের ময়দান ও মসজিদে জুমআর মেম্বারে ধর্মীয় কাজ আঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ১৯৭২ সালের দাপটে মিডিয়া দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করে চলেছেন। যেকোনো আলেম ওলামা বিপদে পড়লেই সবার আগে ছুটে যান সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ,আমি তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। এবার আসি ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের আগে সে সময় প্রায় ৪বার সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন করার পরেও শুনেছি কাগজটা হেড অফিস পর্যন্ত নাকি পৌঁছায়নি,ঐ যে বললাম ইসলামিক মাইন্ডের কারণে অবহেলিত হয়েছিলাম। এবার ২০২৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা তথ্য অফিসে যোগাযোগ করলাম।সাংবাদিক নেতা রাজ্জাক ভাই ও প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি রিপন ভাইয়ের সুপারিশ নিয়ে ঢাকাতে দরখাস্ত জমা দিলাম। ২০২৪ সাল থেকে আমার হাই প্রেসার ও কিডনি রোগ দেখা দেয়। আমি কুষ্টিয়া সনো টাওয়ারে ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিতভাবে ডাক্তার দেখাতে লাগলাম। এখন বর্তমানে প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা ওষুধের পিছনে খরচ হয়। তিন মাস পর পর ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখাতে হয়। অবশেষে আল্লাহর রহমতে জুন মাসের ৩ তারিখে ঢাকা গিয়ে তথ্য ভবন থেকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৫০০০০ টাকার চেক পেলাম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ পাক যেন ঈমানের সাথে রাখেন।এখন আমার উপলব্ধি হচ্ছে সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। এই পেশাকে আমরা অবহেলা করব না। অসম্মান করব না। আমার কোন কাজের দ্বারাএই পেশাকে কলুষিত করবো না। সত্যকে সত্য বলব, মিথ্যাকে মিথ্যা বলব, অন্যায়ের সাথে কোন আপোষ করবো না। আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে অনার্স পড়েছি। ১৯৯৬ সালে এক বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়েছি। শহীদ জিয়াউর রহমান হলে থাকতাম। হলে সিট পেতে আমাদের পাংশার জহুরুল ইসলাম ভাই সহযোগিতা করেছিল। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। কুষ্টিয়া শহরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে ডক্টর প্রফেসর জহুরুল ইসলাম সাহেব আমেরিকাতে একটা বিশ্ববিদ্যালয় উচতর গবেষণা করছেন। অবস্থান করছেন। জিয়া হলের অনেক স্মৃতি আছে। ডাইনিংয়ে খেতে গিয়ে কর্মচারি দের সাথে সম্পর্ক হয়ে যায় ।একজন কর্মচারী আমার সাথে ট্রেনে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। ওদের কথা ভুলে যাইনি। যখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হতাম অনেকেই আমাকে শিবিরের ক্যাডার মনে করত। কর্মচারীরাআমাকে সালাম দিত। কুষ্টিয়া জেলার অনেক ছাত্রছাত্রীর সাথে দেখা হয়েছিল, পরিচয় হয়েছিল, গল্প করতাম। আমাকে সালাম দিত। আমার হলে সুমন নামে একটা ছাত্র থাকতো। ওর র্পিতা বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিল। ও ঢাকাতে প্লেনে আসা-যাওয়া করত। অনেকেই ওর কাছ থেকে টাকা ধার নিতো। রংপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র-ছাত্রীর সাথে পরিচয় হয়েছিল। রংপুরের অনেককেই বলেছি তোমরা এত ফর্সা কেন। সংগঠন করার কারণে ৯৬ সাল থেকে মুখে দাড়ি রাখা শুরু করেছিলাম। ৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার পিতা হেকিম আবেদ আলী মিয়া ইন্তেকাল করেন। দুপুরে খবর পেয়ে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। জানাজার নামাজ পেলাম না। সেই দুঃখটা আজও বহন করে চলেছি। ক্যাম্পাসে অনেককে নোট দিয়ে সাহায্য করেছি। অনেক মেয়ে আমার কাছ থেকে নোট নিতো। কুষ্টিয়ার বন্ধুরাএকসাথে ট্রেনে আসা-যাওয়া করতাম । বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে আমরা একটা পিকনিক করেছিলাম। খুব একটা মজা হয়েছিল। অনেক বন্ধুকে এখনো খুঁজে বেড়াই। অনেকের আর দেখা পাই না।একটা কথা মনে পড়ে গেল । ১৯৯৭ সালে দুইবার আমি আর আমার বন্ধু ডক্টর মাসুদ রহমান বাবু রাজশাহীতে বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম।সে পাস করে গেল। আমি ফেল করলাম। কলেজের একটা প্রফেসর হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ১৯৯৭ও 98 দুই বছর কুষ্টিয়া ল কলেজে ল পড়েছি। ল পাস করা হলো না। দৈনিক শিকল পত্রিকার সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী ভাইয়ের সাথে ১৯৯৫ সালে ঢাকাতে সচিবালয় গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সাহেবের সাথে দেখা করেছিলাম। আমাদের সাথে আলো ভাই আর আতিক আল হেলাল ছিল। এম এ শামীম আরজু ভাই দৈনিক সূত্রপাত নামে একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। এই পত্রিকাতে কুষ্টিয়া চোড় হাঁস বাড়ি মুন্সী শাহীন নামে একটা ছেলে পত্রিকা থেকেই পত্রিকা পরিচালনা করতো। ঈদগাহপাড়ার নজরুল ইশতিয়াকএই পত্রিকাতে তার হাতে খড়ি হয়।শাহীন জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। আমাকে অনেকেই বলেছে সে আন্দোলন বাজারে কাজ করতো। অফিসেই ঘুমাতো। অনেক কষ্ট করে আজ বড় হয়েছে। ঢাকাতে গিয়ে পত্রিকার কাজ করতো। পরে কপাল গুনে চ্যানেল আইতে যোগদান করে। চ্যানেলের প্রতিনিধি হিসেবে দেশ-বিদেশে সফর করে। অবশেষে আজ তার ঠিকানা আমেরিকা। সেখানে সপরিবারে থাকে।আমার সাথে যোগাযোগ আছে। আমি তার শুভ কামনা করি। আরজু ভাইয়ের একটা স্মৃতির কথা না বললেই না। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ বিএনপি'র এই সময় তিনি আমাদের কুষ্টিয়া ঈদগাহ কমিটির সাথে জড়িত ছিলেন। একদিন তিনি ঈদগাহ কমিটির মিটিং এ ডিসি সাহেবের সামনে বললেন, স্যার বছরে এই দুইটা নামাজ পড়ানো মাত্র এই একটা একটাই কি দায়িত্ব। তখন ডিসি স্যার বললেন, আর কি করা যায় শামীম সাহেব, আরজু সাহেব। আপনি প্রস্তাব করুন। তখন আরজু ভাই আমার দিকে তাকালেন। আমি বললাম এই ঈদগাহ কমিটির মাধ্যমে আমরা প্রতিবছর ওয়াজ মাহফিল করতে পারি, এলাকার মানুষের জন্য আরবি শিক্ষা দিতে পারি, শিশুদের জন্য ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারি। সেদিনই প্রস্তাব পাস হলো একটা ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। আমাকে প্রতিযোগিতা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক করা হলো। মনে পড়ে সে সময় ডিসি ছিলেন জামাল এ নাসের চৌধুরী। কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুলে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটা হলো। প্রধান অতিথি হিসেবে ছাত্রদের মধ্যে পুরুষ্কার বিতরণ করলেন ডি সি সাহেব। আরজু ভাই খুব খুশি হলেন। আরজু ভাইয়ের একটা বিশেষ গুণ ছিল উনি যেটা ভালো বুঝতেন মুখ ফুটে বলে দিতেন । এই মানুষটার কথা কখনো ভুলতে পারি না।একটা কথা লেখা হলো না পড়ে গেছে। আমরা যখন আড়ুয়াপাড়া বাড়ি ভাড়া ছিলাম। সম্ভবত সালটা হবে ৭৯ সাল। জিয়াউর রহমান সাহেব ক্ষমতায় ছিলেন। কুষ্টিয়া গার্লস স্কুলে আমাদের শিক্ষক ছিলেন জাফর স্যার। তিনি আমাদের প্যারেড শিখাতেন। তখন তিনি কচিকাঁচা আসরের পরিচালক ছিলেন। আমাদেরকে কুষ্টিয়া হাই স্কুলের মাঠে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নিয়ে গেলেন। ১৯৮১-৮২ সালে ফুলকুড়ি আসরে যোগদান করলাম। পরিচালক আব্দুল লতিফ ভাই হাউজিং এ গান নাটক পিটি পারেড করাতেন। বিভিন্ন কিছু শিক্ষা দিতেন। কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিতে একটা নাটকে অংশ নিয়েছিলাম। নাটক টার নাম ছিল পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজেকে গড়ো। কুষ্টিয়া স্টেডিয়াম মাঠে পিটিতে অংশ নিলাম ফুল কুড়ি আসরের হয়ে। ফুল কুড়িদের পাতা এই নামে একটা পত্রিকা বের হতো সেখানে আমার ছড়া কবিতা ছাপা হয়েছিল। আমাকে সংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেই দিনের কথাগুলো ভুলে যাই নাই। যখন ঈদগাহপাড়াতে থাকতাম, তখন ফুটবল খেলতাম, কুষ্টিয়া যুব স্পোর্টিং ক্লাব এর হয়ে কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে ফুটবলপ্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। আমার সাথে ফুটবল খেলত, আজকের ক্রিকেটার আহমেদ কামাল কর্নেল। বর্তমানে সে জাপানে থাকে। আমার সাথে ফুটবল খেলত কুষ্টিয়া হাই স্কুল মাঠে থানাপাড়ার কাজল মাজমাদার ও কচি খন্দকার।আরো অনেকে, অনেকের নামই মনে আছে,অনেকের নামই ভুলে গেছি । কুষ্টিয়া গড়াই নদীতে, নদীর তীরে বল খেলে নদীতে ঝাঁপ দিতাম। আজ এই লেখাগুলো লিখতে গিয়ে পুরাতন দিনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। এরপর ১৯৮৩ সালে কুষ্টিয়া ঈদগাহ পাড়াতে ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রতিষ্ঠা করেন মরহুম মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব। তখন আমরা শীত বস্ত্র সংগ্রহ করে গরিব মানুষের দিতাম। কুষ্টিয়া লেবার অফিসে কেরাত, গজল, আজান, প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম।নিয়মিতভাবে বিজ্ঞানমেলায় অংশ নিতাম কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। মিল পাড়ার রাশেদুল ইসলাম রিপন নামে একজন আমাদের সদস্য ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞানমেলায় অংশ নিয়েপ্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকার বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছিল। সে সময়ের পত্রিকাতে ওর ছবি ছাপা হয়েছিল। সে ছড়া কবিতা লেখতো, আমরা ওর একটা বই করে দিয়েছিলাম। আজকে সেই ছেলেটির নাম কবি শৈবাল আদিত্য। আমাদের একজন সদস্যের নাম তারিক বিন আজিজ। সে বুয়েটের ভিপি হয়েছিল পরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিল। আরেকজন সদস্য শামসুজ্জামান বর্তমানে আমেরিকায় আছে। ইসলাম ধর্ম প্রচার করে বেড়ায়। মুসলিম কমিউনিটির নেতা। আমার পিতা মরহুম হেকিম আবেদ আলী মিয়া, কুষ্টিয়া হেকিমি দাওয়াখানা কবিরাজি হিসেবে ও হে কিম হিসাবে খুব সুনাম অর্জন করেছিলেন। উনাকে অনেকেই চিনতেন। আমরা ছয় ভাই দুই বোন। চার ভাই মারা গেছেন। এখন আমি সিরিয়ালে আছি।সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন। বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। বর্তমানে একটা নিউজ পাঠানো কষ্টের কাজ নয়। বাংলাদেশে এমন একটা সময় গেছে,যখন কুষ্টিয়া থেকে আরেক জায়গায় নিউজ পাঠাতে হলে খুবই কষ্ট করতে হয়েছিল। আমি নিজের চোখে দেখেছি, কুষ্টিয়া জেলা থেকে অনেক প্রবীণ সাংবাদিক ছিলেন যারা ঢাকার পত্রিকায় নিউজ পাঠাতেন, কুষ্টিয়া টেলিফোন অফিসে গিয়ে টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিউজ পাঠাতেন। টেলিফোন অফিসে গিয়ে লাইন ধরা লাগতো। সিরিয়াল দেয়া লাগতো। অনেকে টেলিফোনের মাধ্যমে নিউজ পাঠাতেন। আমাদের কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ভাই, তিনি ইংলিশ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন, এ ছাড়া আরো অনেক সিনিয়র সাংবাদিক যারা অনেক কষ্ট করে ঢাকাতে নিউজ পাঠাতেন। বর্তমান সময়ে আমাকে যদি কেউ একটা নিউজ দেয়, আমি আমার কম্পিউটারে কম্পোজ করে, অনেক ইমেইল এড্রেস সেভ করা আছে, একটা ক্লিক দিলেই মোট ৪৫০ মিডিয়াতে নিউজ পাঠিয়ে দিই।কোন সমস্যা হয় না। বর্তমানে আমার মনোভাব, নিউজ পাঠাবো, যেই পত্রিকার ইচ্ছে হয়, আমার নিউজ ছাপাতে পারে । আমার কোন যায় আসে না ।কারন আমার নিজের ফেসবুক আছে। সেখানে আমার ৫ হাজার বন্ধু আছে।ইউটিউবে আমার চ্যানেল আছে। একটা কথা বলা হয় নাই, আগেকার দিনে পত্রিকাতে ছবি পাঠাতে অনেক বেগ পেতে হতো। যে কথা অনেক নতুন সাংবাদিকরা আজ জানে না। এসব আজ ইতিহাস। সর্বোপরি সকলের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।