আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক একটি জাহাজের ক্যাপ্টেন, আজ ভিনদেশের কারাগারে বন্দি। তিনি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি মেঘনা প্রেস্টিজ-এর কমান্ডিং অফিসার। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি, ভেনিজুয়েলার একটি বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড চলাকালীন এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনা এতটাই অপ্রীতিকর ও ভুল বোঝাবুঝিপূর্ণ ছিল যে, সেটির দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় একজন নিরপরাধ ক্যাপ্টেনের ওপর। তার পর থেকে তিনি সেই দেশের এক কারাগারে বন্দি।
জানা গেছে, জাহাজের ডুবুরী দল স্থানীয়ভাবে ভেনিজুয়েলার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল, যারা পেশাগত অসতর্কতায় জাহাজের নিচে কিছু ক্ষতি করে। অথচ ক্যাপ্টেন হিসেবে মাহবুবুর রহমানের উপর কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হয়েও তাকে আটক রাখা হয়। জাহাজটি ছাড়া পেলেও, ক্যাপ্টেন মাহবুব এখনো প্রহসনের বিচার প্রক্রিয়ায় বন্দী।
আজ প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও তার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা প্রবাসী কল্যাণ, নৌপরিবহন কিংবা শিপিং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। এর ফলে তার পরিবার এবং দেশের সমগ্র মেরিনার সম্প্রদায় আজ গভীর উদ্বেগে ভুগছে।
বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমরা আশা করি সরকার এই ঘটনায় কেবল ‘দেখছি’ কিংবা ‘তদন্ত করছি’ পর্যায়ে না থেকে, জরুরি কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর হস্তক্ষেপ করে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ভেনিজুয়েলায় বাংলাদেশ দূতাবাস অথবা দূতাবাস না থাকলে কাছাকাছি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মেরিটাইম আইন ও মানবাধিকার নীতিমালার আলোকে তার বন্দিত্বের অবসান ঘটিয়ে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভবিষ্যতে যাতে কোনো বাংলাদেশি মেরিনার এ ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আমরা, দেশের একজন সচেতন নাগরিক ও সাংবাদিক হিসেবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, নৌপরিবহন উপদেষ্টা, প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা, ও শিপিং মন্ত্রণালয়ের সকল দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিএই বিষয়টিকে মানবিক, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সমাধানের পথ তৈরি করুন।
ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান শুধু একজন ব্যক্তির নাম নয়, তিনি এক সেক্টরের মুখ, একটি পতাকার সম্মান বহনকারী। তাকে ভেনিজুয়েলার কারাগার থেকে দ্রুত মুক্ত করে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা এখন শুধু তার পরিবারের আকুতি নয়, এটি গোটা জাতির দাবি।