নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আল-মামুন মিয়া’র বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে বিদ্যালয়ের ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮২ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগপত্রে যে ২৩ টি অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো—

প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম (২০১৮-২০১৯):
প্রধান শিক্ষক পদে স্থলাভিষিক্ত হয়ে বিদ্যালয়ের ট্রাস্টির দায়িত্ব গ্রহণের সময় সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজেই অনিয়ম করেন। এর মাধ্যমে ৯,৭১,৯২৬ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় (২০১৯):
বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বেশি টাকা আদায় করে ৪৮,৩৮০ টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ।

বিনামূল্যের সরকারি বই বিক্রি (২০২২ ও ২০২৩):
সরকারি বিনামূল্যের বই বিক্রি করে ৭৮,০৫৪ টাকা আত্মসাৎ।

ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি:
বানানো বিল-ভাউচার দেখিয়ে বিদ্যালয়ের ৩৭,৭৫,৭৫৭ টাকা আত্মসাৎ।

শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য টাকা প্রদান না করা:
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রাপ্ত ইনক্রিমেন্টের টাকা না দিয়ে ২৯,২৮৯ টাকা আত্মসাৎ।

অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়ম:
বেঞ্চ, ডেস্ক এবং নতুন আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য রেজোলিউশন তৈরি ও স্বাক্ষর জাল করে ১,০৫,০০০ টাকা আত্মসাৎ।

শিক্ষক বদলির আবেদনের জন্য ঘুষ গ্রহণ:
বদলির আবেদন করতে ইচ্ছুক শিক্ষকদের কাছ থেকে ১২,০০০ টাকা আদায়।

বই বিক্রি, সিলেকশন টেস্ট ফি ও ভর্তি ফি আত্মসাৎ:
ভোকেশনাল শাখার শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ফি, ভর্তি ফি এবং পরীক্ষা ফি বাবদ ১,৯৮,০০০ টাকা আত্মসাৎ।

বিদ্যালয়ের মাঠ ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে টাকা আত্মসাৎ:
মাঠের মাটি ভরাট, প্রাচীর নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়ন খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

শিক্ষক মিলনায়তন নির্মাণে অনিয়ম:
বাইরের অনুদানের টাকা দিয়ে মিলনায়তন নির্মাণের কথা বলে ৫৮,০০০ টাকা ভুয়া বিল তৈরি করে আত্মসাৎ।

বাহির থেকে প্রাপ্ত অনুদান ও পুরস্কারের অর্থ আত্মসাৎ:
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের না দিয়ে নিজে রেখে দেন।

মোট ২৩ টি অভিযোগে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত এসব অনিয়মের মাধ্যমে তিনি প্রায় ৫৫ লাখ টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ আছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও স্থানীয়দের দাবি, এই দুর্নীতির ঘটনায় বিদ্যালয়ের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে অর্থ পুনরুদ্ধার ও দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  আবুবক্কর সিদ্দিকী  বলেন, "এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে তদন্ত রিপোর্ট পেলে তা মাউশিতে প্রেরন করা হবে।

সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল-মামুনের দূর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্ত চলমান আছে এবং খুব দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আল-মামুনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।