জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। সেখানে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসনে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন উপদেষ্টা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন,  “না, কোনো কোটা থাকবে না। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী আমরা সুযোগ করে দেব। ফ্ল্যাট দেওয়া, চাকরির কোটা—এসব আমাদের পরিকল্পনার অংশ না। তবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার যার চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে বা আত্মকর্মসংস্থান নিশ্চিত করে সহযোগিতা করা হবে।”

তিনি আরও বলেন,  “হাঁস-মুরগি পালন, পশুসম্পদ কিংবা অন্য কোনো খাতে যদি কেউ নিজেকে আত্মনির্ভর করতে চান, সরকার সে অনুযায়ী সহায়তা দেবে।”

উপদেষ্টা জানান, শহীদ পরিবার হিসেবে ৮৪৪ জনকে তালিকাভুক্ত করে ইতোমধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধা হিসেবে 'ক' শ্রেণিতে ৯০৮ জন, 'খ' শ্রেণিতে ৪ জন এবং 'গ' শ্রেণিতে ১০ হাজার ৬৪২ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৭২টি শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে।বাকি **২০ লাখ টাকার এককালীন অনুদান** চলতি অর্থবছরের মধ্যেই হস্তান্তর করা হবে। এ পর্যন্ত জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে ২০২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

কোটা প্রসঙ্গে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন,  “মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গ এখানে টানা উচিত নয়। তাঁরা মহান। তাঁদের অবদান ইতিহাসে অনন্য।”

উপদেষ্টার বক্তব্যে পরিষ্কার, সরকার পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তায় আগ্রহী হলেও চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের মতো পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়। বরং মেধা ও যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দিতে চায় প্রশাসন।

জুলাই গণআন্দোলনের শহীদ ও যোদ্ধাদের মর্যাদা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের প্রশ্নে একদিকে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান দেখা গেলেও অন্যদিকে কিছু বিতর্কও তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুলনা না টানার বক্তব্যটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ভিন্নমতকে উস্কে দিতে পারে।

কোটা না থাকলেও পুনর্বাসনের উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তা যে ব্যতিক্রমী পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে, তা প্রমাণ করে—সরকার জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগকে একেবারেই অস্বীকার করছে না, বরং তা অন্যভাবে মূল্যায়নের চেষ্টা করছে।