বিগত ২২ মে, তারিখে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি অবশেষে ২৫ মে, শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় "রেমাল" এ রূপ নেয়।
শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়ার একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (নং - আট) এ এসব তথ্য জানানো হয়েছে । বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের 'আইসল্যান্ড সাগর' এবং বাংলাদেশের 'খেপুপাড়া, পটুয়াখালীর' মধ্য দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় জনসাধারণের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে "পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ সকল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ,ঘোষণা করেছে"- বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ.)। শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ. র পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় শনিবার বেলা ১১ঃ৩০ মিনিট এ জেলা প্রশাসনের হলরুমে "জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি" র একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এবং দশটি উপজেলার "উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ" অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মহোদয়।
এ সময় জেলা প্রশাসক মহোদয় জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় মোট ৫৪১ টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ২৪৩ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাবি হাতের কাছে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
পাশাপাশি নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ৯৩ মেট্রিক টন চালও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুকনো খাবারের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। এবং জেলা সিভিল সার্জন স্যারের অধীনে ৯৮ টি মেডিকেল টিম গঠন করে রাখা হয়েছে। যারা আপাতকালীন মুহূর্তে সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনাবাহিনী সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস এর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সিপিপি, স্কাউট সদস্য ও এনজিও কর্মীদের প্রস্তুত থাকার জন্য ও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রেমাল মোকাবেলায় বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ভোলায় প্রস্তুতি সভা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সকল সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের কাছে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ,ব্যক্তিগত বহুতল ভবন, অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সকল স্থানে মাইকিং এবং আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য প্রচার করতে বলা হয়েছে। গৃহপালিত পশু পাখির প্রতি ও নজর দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে বরিশাল বিভাগের নয়টি নদীর পানি ই বাড়তে শুরু করেছে। দুপুরে এবং সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টি হলেও তাতে তাপমাত্রা কিংবা গরমের কোনরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। রাত তিনটার পর থেকে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। আকাশে ঘন- কালো মেঘ জড়ো হলেও চাদের আলো দেখা যাচ্ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের ৭০ শতাংশ ই বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে এবং বাকি মাত্র ৩০ শতাংশ ভারতের স্থলভাগে আঘাত আনতে পারে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকেও ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আপাতকালীন দুর্যোগ এড়াতে "শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি, ম্যাচ, টর্চ, খাবার স্যালাইন, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র" হাতের কাছে রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।