পিরোজপুর-০১ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা জোড়ালো হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে গণসংযোগ ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড ব্যপক ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশেষ করে ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে জেলা কমিটি পর্যন্ত সবই নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেন যে যার দলের মতো করে।
পিরোজপুর-০১ আসনে সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় নাম এখন মাসুদ সাঈদী। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের অনন্য ব্যাক্তিত্ব আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সেজ পুত্র। মাঠে-ময়দানে তৃণমূলে মাসুদ সাঈদীর সক্রিয় উপস্থিতি এবং পারিবারিক জনপ্রিয়তায় নির্বাচনী হিসাবনিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাসুদ সাঈদী ২১ হাজার ৭৭টি ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল খালেক গাজী পেয়েছিলেন মাত্র ৬ হাজার ৬১৫ ভোট। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক ভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদীর। তারপর থেকেই তার আচরণ-ব্যবহার, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, জনগনের সকল প্রয়োজনে পাশে থাকা, বিশেষ করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় অসহায় দুঃস্থ মানুষের পাশে থাকাসহ নানাবিধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের গভীরে একটি বিশেষ স্থান করে নেন জননন্দিত এই নেতা। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচনে আল্লামা সাঈদী ৫৫ হাজার ৭১৭ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য সুধাংশু শেখর হালদারকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থী হিসাবে  তিনি ১ লক্ষ ১০ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আবারও তার কাছে সুধাংশু শেখর হালদার পরাজিত হন ৭৬,৭৩১ ভোট পেয়ে। পিরোজপুর-১ আসনে আল্লামা সাঈদী যে ভোট ব্যাংক তৈরি করে গিয়েছেন, নিজের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সেটাকে এখন অপ্রতিরোধ্য দূর্গ বানিয়ে ফেলেছেন জনতার নেতা মাসুদ সাঈদী। তাই এই আসনে মাসুদ সাঈদীর সাথে ভোট যুদ্ধে টিকে থাকতে পারাটাই এখন বড় প্রশ্নের বিষয়। 

আল্লামা সাঈদীর জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় মাসুদ সাঈদীও এলাকায় নিজস্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক বলয় গড়ে তুলেছেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের আমলে জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ফ্যাসিষ্টদের সকল বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জের কাঁচা রাস্তা ইট সোলিং করণ, কালভার্ট নির্মান, স্কুল-মাদরাসার নতুন ভবন নির্মান ও সংস্কার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে উপজেলাবাসীর জন্য সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মাসুদ সাঈদী তার নেতৃত্বকে অপ্রতিদ্বন্ধী করেছেন। এছাড়া প্রতিবছর দাখিল/এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫/জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ন কৃতি শিক্ষার্থীদের ক্রেষ্ট ও মেডেল প্রদান করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মনযোগি হতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। প্রতিবছর কৃতি শিক্ষার্থীদের ক্রেষ্ট ও মেডেল দেওয়ার এই প্রথা জিয়ানগর উপজেলায় মাসুদ সাঈদীই চালু করেছেন।

বিশেষ করে ২০১২-১৩ সাল থেকে শুরু করে ২৪'র ৫ আগষ্ট পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগ মামলাই মাসুদ সাঈদী দেখভাল করেছেন, তাদের জামিনের জন্য প্রয়োজনে হাইকোর্টে গিয়েছেন। মামলায় জর্জরিত প্রায় সকল নেতা-কর্মীদের বাড়িতে তিনি মাসিক বাজার পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের পরিবারের খোঁজখবর রেখেছেন। এসব কিছুই মাসুদ সাঈদীর জনপ্রিয়তাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।

আধুনিক পিরোজপুর বিনির্মানে আল্লামা সাঈদীর রয়েছে বিশেষ অবদান। যার ফলে সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদীর প্রতি নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকলের রয়েছে বিশেষ আকর্ষন। তাছাড়া মাসুদ সাঈদীর ব্যাপারে তরুন প্রজন্মের আগ্রহের কোন শেষ নেই। শহীদ আল্লামা সাঈদীর মামলা ট্রাইবুনাল ও সুপ্রীম কোর্টে পরিচালনা করার কারনেও তার প্রতি পিরোজপুরের নারী-পুরুষের অন্যরকমের এক ভাললাগা রয়েছে। এক কথায় পিরোজপুর-১ আসনের সকল পর্যায়ের জনগনের কাছে বারবার উচ্চারিত একটি নাম- মাসুদ সাঈদী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়ানগরের পত্তাশী ইউপি সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জননেতা মাসুদ সাঈদী যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন আমি তখনও ইউপি সদস্য ছিলাম। তিনি দল-মত নির্বিশেষে বৈষম্যহীনভাবে সকলকে উন্নয়য়নমূলক কাজ করেছেন। এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য আমাদেরকে তার পিছনে পিছনে ঘুরতে হয় নাই, বরং তিনি আমাদেরকে সাথে নিয়ে এলাকা ঘুরে ঘুরে প্রয়োজন মাফিক বরাদ্দ দিয়েছেন। সুতরাং এলাকার উন্নয়নে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মাসুদ সাঈদীর বিকল্প কেউ নাই।’

ইন্দুরকানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন কুমার ডাকুয়া জানান, ‘২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পরে উদ্ভুত রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রনের জন্য মাসুদ সাঈদী নিজে এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাইকিং করে জনসাধারণকে শান্ত করেন। প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এমনকি গত দুর্গাপূজায় তিনি জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিরপুর উপজেলার শহীদ জিয়া কলেজের সহকারী প্রভাষক প্রদীপ হালদার জানান, ‘নাজিরপুর মূলত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। মাসুদ সাঈদীর সবচেয়ে বড় গুন হলো নিঃস্বার্থ জনসেবা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গরীব দুঃখীর সুখে দুঃখে পাশে থাকা ও এলাকার উন্নয়নে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা। আর এ কারনেই নাজিরপুরের সনাতনী ধর্মের প্রায় সকল ভাই বোনেরা মাসুদ সাঈদীকে নির্বাচিত করার জন্য কাজ করছে। তার পিতা আল্লামা সাঈদীর সময় কোন হিন্দু নির্যাতিত হয় নাই বরং আমরা সকলে তার দ্বারা উপকৃত হয়েছি। এবার সেই ঋণ পরিশোধ করবো, আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পিরোজপুর জেলা শাখার সভাপতি বাবুল হালদার জানান, মাসুদ সাঈদী সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আল্লামা সাঈদী পিরোজপুুর ১ আসনে দুই বারের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় এই এলাকায় কোন হিন্দুদের উপরে সামন্যতম জুলুম হয় নাই। তার সন্তান মাসুদ সাঈদীর মাধ্যমেও কোন হিন্দু ব্যক্তির কোন ক্ষতি হয় নাই বরং তিনি আমাদের সকল বিপদে আপদে পাশে থেকেছেন। মাসুদ সাঈদী অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সৎ মানুষ। পিরোজপুরে জামায়াতের লোকজনও কোথাও কোন হিন্দুদের উপরে অন্যায় অত্যাচার করেছে বলে আমার জানা নেই।’ বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘আল্লামা সাঈদীর জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় মাসুদ সাঈদীও পিরোজপুরে তুমুল জনপ্রিয় ব্যাক্তি। আওয়ামীলীগের শাসনামলেও জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতার বলে তিনি জিয়ানগর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি তার সকল কথা ও কাজে সততা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, পিরোজপুরবাসী এবার এর মূল্যায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।’ 

পিরোজপুর জেলা জামায়াতের আমীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন ফরিদ জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিশেষ কেন্দ্র ও গ্রাম কমিটি গঠন করা হচ্ছে। পিরোজপুর-১ আসন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আসন হওয়ায় এবং সততা ও যোগ্যতার কারনে তারই পুত্র মাসুদ সাঈদীর পিরোজপুরে ব্যাপক জনপ্রিয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় মাসুদ সাঈদীরই বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।

সরেজমিনে পিরোজপুর-০১ আসন ঘুরে দেখা যায়, ইতোমধ্যেই জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ, সুধী সমাবেশ বা মতবিনিময় সভার মাধ্যমে সর্বত্র ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুদ সাঈদী। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে থানা ও জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে তরান্বিত করতে নানা ধরণের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা আগামী নির্বাচনে মাসুদ সাঈদীর জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।