বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একবছরেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী নিষিদ্ধ  ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একবছরেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 
শিক্ষার্থীরা জানাম ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের দ্রুত দৃশ্যমান বিচার না করলে আন্দোলনের ডাক দিবেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপরে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। সাম্প্রতিক বেশ কিছুদিন যাবৎ ছাত্রলীগের আনাগোনা বেড়েছে ক্যাস্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ছাতিম তলা ও বিভিন্ন চায়ের দোকানে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা ও শলাপরামর্শ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। শিক্ষার্থীদের ধারনা নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তাদের গোপন কার্যক্রম চলমান। এমনকি কিছুদিন আগে ১৫-২০ জনের একটি শোডাউনের ভিডিও তাদের গ্রুপে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ এ সংগঠনের কার্যক্রমের আশ্রয়দাতা হিসেবে নাম উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলিম সালেহির বিরুদ্ধে।
গত ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হামলায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগকর্মী শাহরিয়ার সানকে দরজা ভেঙে ছাড়িয়ে নিয়ে বিজয় মিছিল করে তার সহকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলার ঘটনায় করা মামলার ১৭নম্বার আসামি ছিলো এই সান।
গত বছরের ২৯ জুলাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিটিংরত আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী । হামলায় ১৫ জন আহত হয়ে শেরে বাংলা মেডিকেলে কলেজে চিকিৎসা নেয়। এছাড়াও ১ আগস্টে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় হয়রানি, হেনস্তা, ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা প্রদান সহ পুলিশ প্রশাসনের সাথে মিলে আন্দোলন বানচাল করা ও সমন্বয়কদের পুলিশি গ্রেফতারে সহযোগিতা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
 এই সকল ঘটনার প্রমাণ থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা আরো জানান, এসব হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঘুরতেও দেখা যায় অনেককে। যাদের হাতে এখনো শহিদের রক্ত লেগে আছে এবং ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে তাদের এইভাবে বিচারহীনভাবে পার পেয়ে যাওয়াকে শিক্ষার্থীরা হাজার হাজার শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি বলে মনে করছেন তারা।
হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নামমাত্র দায়সারাভাবে একটি মামলা করা হলেও সেটির কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের মামলার সাক্ষী করা হয়েছে কিন্তু সাক্ষী  না দেয়ায় মামলা আগাচ্ছে না। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু একটা দায়সারা মামলা করে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। তাদের দাবি এসব ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার নিজস্ব আইনে শাস্তি প্রদান করুক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদি হয়ে ২৪জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার আসামিরা হলেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের  আবুল খায়ের আরাফাত, আবিদ হাসান (গণিত বিভাগ; ২০১৫-১৬ সেশন), মাহমুদুল হাসান তমাল (আইন বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন), আল সামাদ শান্ত (ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন), খালেদ হাসান রুমি (ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন), সাইফ আহমেদ (অর্থনীতি বিভাগ; ২০১৭-১৮ সেশন),সাব্বির হোসেন (বাংলা বিভাগ; ২০১৮-১৯ সেশন), শরীফুল ইসলাম (একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ; ২০১৮-১৯), রাকিবুল হাসান (বাংলা বিভাগ; ২০১৮-১৯)।
এছাড়াও মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের টিকলী শরিফ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অশোক আলী, আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সান, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রসেনজিৎ। 
হামলায় আহত শিক্ষার্থী মো.সিরাজুল ইসলাম বলেন,"আন্দোলন চলাকালীন ২৯ জুলাই ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তাদের সামনেই আমাদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়, যেখানে প্রক্টরিয়াল বডি নীরব ভূমিকাই বলে দেয় ববির তৎকালীন প্রশাসন হয় ছাত্রলীগের চেয়ে দুর্বল ছিল নয়তো ছাত্রলীগকে মদদ দিচ্ছিল। হামলার পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা আমাদের হতাশ করেছে। প্রশাসনের পটপরিবর্তন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো লিগ্যাল অ্যাকশন নেয়নি। যা সুস্পষ্টভাবে ববি প্রশাসনের দুর্বলতার প্রমাণ অথবা বিপ্লবকে অবজ্ঞা।"তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এসব  হামলার ঘটনাকে সুষ্ঠু তদন্ত করে লিগ্যাল পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করে, তাহলে ২৪ এর জুলাইয়ের আহতদের রক্তের সাথে প্রতারণা করা হবে। ববির ছাত্র সমাজ তা মেনে নিবে না।"
হামলায় আহত আরেক শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদ বলেন,"ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক,ববিতে এখনো ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সেই রকম কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। আমি অবনতিবিলম্বে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত)রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন," ২৯ই জুলাই  ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে এবিষয় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে, এবং এই মামলাই আমাদের সিকিউরিটি অফিসার কে বাদী করা হয়েছে। এই অভিযোগ যেহেতু থানার কাছে সেখানকার বিচার তো বিশ্ববিদ্যালয় করবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এবিষয় কোনো অভিযোগ নাই। এবং কোনো শিক্ষার্থী প্রক্টরিয়াল দপ্তরের কিংবা রেজিস্ট্রার দপ্তরে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীদের বিবাদি করে কোনো অভিযোগ দেয় নাই। আর থানায় যাদেরকে সাক্ষী করা হয়ছে তারাও সাক্ষী দিতে যাচ্ছে না, যার ফলে থানা থেকে এখনো শার্সিট দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ও অভিযোগ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অথরিটি কিছু করার সুযোগ হচ্ছে না।"তিনি আরো বলেন,"গত বছর দু'জন শিক্ষার্থী প্রক্টরিয়াল দপ্তরে একটা অভিযোগ করেছিল। তখন এটা নিয়ে একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে আহ্বায়ক বিদেশে চলে যাওয়া রিপোর্টটা জমা হয়নি। সে বিষয় গতকাল ভাইস-চ্যান্সেলর উপস্থিতিতে আমরা প্রক্টরকে জানিয়েছি। এবং তিনি বলেছেন কমিটিকে রিফর্ম করে অথরিটিকে জানাবেন এবং এব্যাপারে প্রসিডিউর নিবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।"
এবিষয় জানার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক তৌফিক আলমের কাছে ২দিনে ৪বার সাক্ষাৎ করতে চাইলেও ওনার সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়নি ।