বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব) আবদুল মান্নান গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খামার বাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের সশস্ত্র সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সদস্যদের সমন্বয়ে জাতীয় সেনাবাহিনী গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সূচনা বক্তব্যে মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান বলেন, দ্রুত অগ্রসরমান একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ যার রয়েছে অনন্য ভৌগলিক, জনসংখ্যাগত এবং ভূরাজনৈতিক চরিত্র। ভবিষ্যত জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশের প্রতিরক্ষা এবং আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা সুরক্ষার জন্য উদ্ভাবনী সামরিক পন্থার প্রয়োজন।এই প্রস্তাবটি বিদ্যমান নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর পরিপূরক শক্তি হিসাবে একটি জাতীয় সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা, কাঠামো এবং সূবিধার রূপরেখা দেয়। এই উদ্যোগটি দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রতিরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর পথ অনুসন্ধান করে ।

বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় সেনাবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে তিনি ১১ দফা সংবলিত একটি লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

বিশিষ্ট সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আমসাআ আমীন বলেন, কোনো দেশের মিলিটারি একা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না, যুদ্ধ করে সমগ্র জাতি। একটা মিলিটারি বাহিনী যুদ্ধ বাস্তবায়ন করে থাকে। এক্ষেত্রে একটি পলিটিক্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক থাকা দরকার।একটি  দেশের মিলিটারি যদি দুর্বল হয় তাহলে সেই জাতিও দুর্বল হয়। আমাদের বিশেষ এজেন্সীগুলিও দুর্বল।যে কারণে অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখানে অবাধে ভূমিকা রাখতে পারে। বিডিআর হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন -একজন অফিসারও সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি। কিন্তু জুলাই বিপ্লবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাকে পরাজিত করেছে। জুলাই যোদ্ধাদের স্পিরিটকে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনে কাজে লাগাতে হবে। রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।মনে রাখতে হবে আমাদের অনেক মীর জাফর রয়েছে কিন্তু সততায় ও দেশপ্রেমে জিয়াউর রহমান একজনই ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য ন্যাশনাল আর্মি গঠনের প্রস্তাব অত্যন্ত দূরদর্শিতার প্রতিফলন। এই ফোর্স জাতীয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেগুলার বাহিনীর পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে।

বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য উপাধ্যক্ষ মোঃ আসাদুজ্জামান বাচ্চু বলেন, তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার সাথে আজকের প্রস্তাবনা দারুনভাবে মিলে গেছে।এমন সময়োপযোগী ও দূরদর্শী প্রস্তাবনা তৈরির জন্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে যে বিশেষ টিমটি কাজ করেছে তাঁদের প্রত্যেককে দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বলেন,দূর্বল ব্যক্তি বা রাষ্ট্র শান্তিকামী হলেও চাইলেই তারা শান্তিতে থাকতে পারে না।যে জাতি যত শক্তিশালী সে জাতির শান্তির নিশ্চয়তা তত বেশি। ফিলিস্তিনিরা শান্তিবাদী হলেও তারা শান্তিতে নেই কারণ তারা সামরিক শক্তিতে অত্যন্ত দূর্বল। ইরানের পাল্টা আক্রমণের পর ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধে আমেরিকার হস্তক্ষেপ চেয়েছে। শক্তি প্রয়োগের সক্ষমতা না থাকলে ইসরাইল আরো আগ্রাসী হতো তখন ইরানের শান্তি কামনায় শান্তি আসতো না,আসতো ফিলিস্তিনিদের মত গণহত্যা ,জুলুম ,নির্যাতন ও আগ্রাসন। অতএব জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সামরিক সক্ষমতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।ন্যাশনাল আর্মি বা ন্যাশনাল ফোর্স বা ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স যে নামেই ডাকুন না কেনো এই প্রস্তাবনাকে,মূল কথা হচ্ছে সমগ্র জাতিকে সামরিক ধ্যান ধারণায় সমৃদ্ধ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত করতে হবে। আমাদের নিরাপত্তার ভাবনা আমাদেরকেই ভাবতে হবে যাতে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলো চোখ রাঙাতে ভয় পায়। কেননা,দূর্বল রাষ্ট্র বন্ধুত্বের মাপকাঠিতেও দূর্বল।

গোল টেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেজর জেনারেল নাঈম আশরাফ চৌধুরী (অবঃ),লেঃ জেনারেল(অবঃ) মোহাম্মদ আমিনুল করিম,এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) শফিকুর রহমান,নেভী ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ (অবঃ), উইং কমান্ডার খন্দকার এ এফ এম মহিবুল্লাহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত কন্ট্রোলার জাকির হোসেন, প্রফেসর সালাহউদ্দিন ঈমাম,এবিএম মাহমুদ,আশফাক মান্নান ,কেমিস্ট ফেরদৌসী আক্তার বৃষ্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুর রহমান মৃধা, মহসীন চৌধুরী,ওয়াসিমুল ইসলাম,জুবরান গাজী , বিএনজের চেয়ারম্যান এডভোকেট এমন সিদ্দিকুর রহমান খোরশেদ, ডঃ কাজী কামাল আহমেদ,তাজরিনা মান্নান, নাগরিক মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী আহসান উল্লাহ শামীম, দৈনিক ঐশী বাংলার উপদেষ্টা সম্পাদক এস এম আমানউল্লাহ প্রমুখ।