আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দুর্গ খ্যাত ২৯ গাইবান্ধা ১ এ আসনটিতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর খ্যাত জাতীয় পার্টির কাউকে মাঠে দেখা না যাওয়ায় দীর্ঘদিনের দাবি করে আসা জামাতের ঘাঁটি বলে খ্যাত এ আসনটিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও জামাত মনোনীত প্রার্থী মাজিদুর রহমান তার নিজ দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ডোর টু ডোর আগাম নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এখন পর্যন্ত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এই আসনটিতে জিততে পারেনি। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজ নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টি মাঠে না থাকায় তারা এ আসনটিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। 
এদিকে পাঁচই আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এ আসনটি উপহার দেয়ার জন্য বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা  নিরলস ভাবে দিনরাত একাকার করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে জনমত গঠনে আগামীর দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।বিএনপি থেকে নির্দিষ্ট করে কাউকে মনোনয়ন দেয়া না হলেও তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া,সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ বাবুল আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক। 

তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর পাশাপাশি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসিনের নাম শোনা গেলেও বর্তমানে তারা কেউ মাঠে নেই।এই মহুর্তে জাতীয় পার্টিকে নিস্ক্রিয় অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। 
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি শূন্য মাঠে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ জামাত।যেহেতু বিগত নির্বাচনে জামাত এককভাবে এ আসনটিতে জয় লাভ করতে পারেনি তাই বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে এ আসনটি ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে তারা উপহার দিতে চান।

উল্লেখ্য প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ হলেও ২৯ গাইবান্ধা ১ সুন্দরগঞ্জ আসনটি ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে এটি ২৯তম আসন।গঠনের পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত  দুটি উপনির্বাচন সহ মোট নয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনটিতে জাতীয় পার্টি পাঁচবার, আওয়ামী লীগ দুইবার, চারদলীয় জোট একবার,স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়লাভ করেন। 
১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৮ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৪৪ জন,নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭৪ জন। 
এ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মোঃ হাফিজুর রহমান।তিনি পরপর দূবার নির্বাচত হন এবং ১৮৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে একই দলের ওয়াহিদুজ্জামান সরকার বাদশা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।এরপর ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের আবু সালেহ মোহাম্মদ আবদুল আজিজ, ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে ডাঃ আঃ কাদের খান,২০১৪ সালে লোক দেখানো ভোটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মন্জরুল ইসলাম লিটন,২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার মৃত্যুর পর ২০১৭ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে গোলাম মোস্তফা জয় লাভ করেন।সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণের ৬মাস পূর্বে তিনিও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ফলে ২০১৮ সালে আবার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।২০১৮ সালের উপনির্বাচনে ৬ মাসের জন্য জাতীয় পার্টি থেকে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।একই বছর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে পূনরায় ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নির্বাচিত হন। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ডামি ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার নির্বাচিত হন।

৯ টি নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে এ আসনটি বরাবরেই জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী ১৯৯১সালে ২১.৭%,১৯৯৬ সালে ২৯.৪%,২০০১ সালে ৪০.৯%,২০০৮ সালে ৩০.৮% ভোট পেয়ে আসলেও মাত্র একবার চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচিত হতে পেরেছেন। অপর দিকে এ আসন থেকে বিএনপি থেকে মনোনীত অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ ও জাকারিয়া ইসলাম খন্দকার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।
তাই এবার জোটে নয়, আলদা আলাদা হয়েই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯গাইবান্ধা-০১ (সুন্দরগঞ্জ)  আসনে লড়তে হবে জয়ের জন্য। যেহেতু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় দলের টার্গেট তরুন ভোটার যা মোট ভোটারের প্রায় ৪০ % যারা বিগত ১৫ বছর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরাই হবেন ট্রাম্প কার্ড।আওয়ামী ও জাতীয় পার্টি শুন্য মাঠে এ আসনে জামাত-বিএনপি লড়াই হবে সমানে সমান।জিততে হলে উভয় দলকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা।এ তরুন প্রজন্মের ভোট যেদিকে সুইং করবে তারাই এ আসনে জিতবে বলে ধারণা করছেন সাধারণ মানুষ।