পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শাহিন মোল্লা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মা–বাবার সংসারের খরচ দিতেন তিনি। এক সপ্তাহ আগে ভান্ডারিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচন উপলক্ষে বাড়িতে আসেন শাহিন।

ঝালকাঠি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া শাহিন মোল্লা (৪০) চট্টগ্রামের একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের ট্রাকচালকের কাজ করতেন। সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। গত ১৭জুলাই ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছিলেন গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর–পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামে। নির্বাচন শেষে পিতা আব্দুস সালাম মোল্লাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিজ কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল তার। শনিবার মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে শাহিন মোল্লা সহ পিতা সালাম মোল্লার। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পথে একই সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে তাদের। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ভান্ডারিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন শাহিনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা আক্তার। রাত নয়টায় জানাজা শেষে বাবা-ছেলের লাশ বাড়িতে রাখা হয়। দাফনের আগে অপেক্ষা করা হয় নাজমার জন্য।

রাত ১২টার দিকে নাজমা আক্তার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে শেষবারের মতো স্বামী ও শ্বশুরকে দেখেন। এ সময় বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। হাজারির এক পর্যায়ে নাজমা আক্তার বলেন, উনি (শাহিন) পৌরসভার নির্বাচনে ভোট দিতে বাড়িতে এসেছিলেন। আসার সময় আমাকে বলেছিলেন, ভোটের পর চট্টগ্রামে ফিরবেন। বাড়িতে থাকার সময়ে প্রতিদিন মুঠোফোনে আমার খোঁজখবর নিতেন। আমাদের অনাগত সন্তান নিয়ে তাঁর কত উচ্ছ্বাস ছিল। আমাদের প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসতেছে। সন্তানের জন্য অনেক পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সেই সন্তান আর বাবাকে দেখতে পাবে না। বাবাও সন্তানকে দেখে যেতে পারল না। নাজমা আক্তার আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার সন্তানের মতন এমন দুর্ভাগ্য কারও জীবনে যেন না আসে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শাহিন মোল্লা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মা–বাবার সংসারের খরচ দিতেন তিনি। এক সপ্তাহ আগে ভান্ডারিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচন উপলক্ষে বাড়িতে আসেন শাহিন।

স্ত্রী নাজমা আক্তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রামের ভাড়া বাড়িতে রেখে আসেন। দু–তিন দিনের মধ্যে তাঁর চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামে যাওয়ার আগে বাবা আবদুস সালাম মোল্লার হার্টের সমস্যার জন্য চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন তিনি। এ জন্য গতকাল সকালে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য বাবা ও ছোট ভাই রাসেল মোল্লাকে নিয়ে ভান্ডারিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভাগীয় শহর বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা করেন ৷ আহত রাসেল মোল্লা জানান, ভান্ডারিয়া থেকে বাসটিতে ওঠার পর থেকে চালক তাঁর পাশের সিটে বসা যাত্রীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। তিনি পথে বাস থামিয়ে অনেক যাত্রী তুলছিলেন। এ নিয়ে বাসের যাত্রীদের সঙ্গে চালকের ঝগড়া হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পুকুরে পড়ে যায়। প্রতিবেশী ফেরদৌস মোল্লা জানান, শাহিন মোল্লা ভান্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ভোট দিতে কয়েক দিনের জন্য নিজ বাড়িতে এসেছিলেন। অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসার পরে তাঁর চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। শাহিন মোল্লার আয়ে পুরো সংসার চলত। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি অচল হয়ে পরেছে ৷ এ দিকে, ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ. লীগের সাধারন সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ভান্ডারিয়া উপজেলার নিহত হওয়া ৮জনের লাশ দাফনের জন্য মিরাজুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জন প্রতি ৫০,০০০/- টাকা অনুদান প্রদান করেন৷