শনিবার ৭ ই জুন ঈদুল আযহার নামাজের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান

শনিবার ৭ ই জুন ঈদুল আযহার নামাজের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।
উপ-মহাদেশের প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত  ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। এর মধ্যদিয়ে ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত  হতে যাচ্ছে এই মাঠটিতে।

শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, ঈদের জামাত শুরুর আগে শটগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হবে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।
জামাতে ইমামতি করবেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের আমলে ২০০৯ সালে ইমামতি হারানো  কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার মসজিদের সম্মানিত খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই। উল্লেখ্য আওয়ামী সরকারের পতনের পর বর্তমান ইমাম এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজেও ইমামতি করেছেন। আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি ইমামতি করতে পারেননি। শোলাকিয়া মাঠের বর্তমান ইমামের বাবা ঐতিহ্যবাহী হয় রত্নগর আলিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত অধ্যক্ষ মরহুম আবুল খায়ের মোহাম্মদ নুরুল্লাহ  দীর্ঘদিন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ইমামতি করেছেন। আবুল কায়েম মোহাম্মদ নুরুল্লাহর মৃত্যুর পর তার সন্তান  মুফতি আবুল কায়েম মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ইমামতি করছেন। মুফতি আবুল কায়েম মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আওয়ামী সরকারের আমলে ১৬ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ইমামতি করতে পারেননি। জুলাই বিপ্লবের পর থেকে পুনরায় তিনি ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন। 

বুধবার (৪ জুন) বেলা ১১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন শেষে ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওক কিশোরগঞ্জের  জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
 জেলা প্রশাসকের পর  আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ব্রিফ করেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মোহা. কাজেম উদ্দীন ও রেব -১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মো. আশরাফুল কবির।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। তাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানি ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুসল্লিদের কোনো শারীরিক সমস্যা হলে এখানে মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও কাজ করবেন।

তিনি আরও জানান, ওয়াচ-টাওয়ার ও মাঠের আশপাশে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে যেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ,  রেব, আনসারসহ আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। 

ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে মুসল্লিদের জন্য প্রতি বারের ন্যায়  ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

এদিকে  ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার মোহা. কাজেম উদ্দীন গণমাধ্যমকে  বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকার ফুটেজগুলো আমরা সংগ্রহ করবো। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ধরনের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়া প্রত্যেকটি গেটে আর্চওয়ে থাকবে। এরমধ্য দিয়ে এই নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে মুসল্লিদের। এছাড়াও প্রত্যেককে সার্চ করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর থাকবে।

তিনি আরও জানান, মুসল্লিদের প্রবেশ পথে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা ফোর্স দিয়ে চেকপোস্ট ডিউটি করা হবে। আশপাশে যেসব স্থাপনা রয়েছে, প্রত্যেকটা স্থাপনাতে পুলিশ ডিউটিতে থাকবে। এরই মধ্যে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সেখানে কাজ করছে। আশপাশের যে সকল  হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো রয়েছে, সেগুলোকেও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।  চার স্তরে নিরাপত্তার বেষ্ঠনী  থাকবে। এবার কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই।

 র‍্যাব -১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মো. আশরাফুল কবির বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহে আসা-যাওয়ার গেটগুলোতে আনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। ওয়াচ-টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে যেন যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করা যায়। বেশকিছু প্যাট্রল কার থাকবে। সেগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে। এছাড়াও ট্রেনে দূরদূরান্ত থেকে ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে রেব সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।

উল্লেখ্য যে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের আগমনে।

জনশ্রুতি আছে, বারোভূঁইয়া নেতা ঈশা খাঁর বংশধর শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের ওই জামাতে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এ মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে। প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতই এ উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ জামাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আরো জানা গেছে দেশের উত্তরবঙ্গে দিনাজপুর জেলায় গোরা ময়দান নামে একটি বৃহৎ ঈদগাহ ময়দান রয়েছে। শেখানোও ঈদের বৃহত্তম নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও প্রচুর মুসল্লির সমাগম হয় বলে জানা গেছে।