এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন আমি আমার স্ত্রী ও একজন নতুন শিক্ষক নিয়ে বিদ্যালয় চালাই। গত বৃহস্পতিবার নতুন শিক্ষক উপজেলায় কাজে গিয়েছিল, আমার সন্তান অসুস্থ থাকায় আমরা দুজন যেতে পারিনি। আপনারা এসেছেন খবর পেয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা হয়নি।

বেলা ১২ টা বাজলেই স্কুল বন্ধ। কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা মাসে চার পাঁচদিন আসেন স্কুলে। অজুহাত,  শিক্ষকরা কেউ নিজে অসুস্থ, কারও সন্তান অসুস্থ, কেউ সরকারি কাজে ব্যস্ত , কেউ খেয়া পারাপারে নৌকা পাওয়া যায়নি।   এসব কারনে বিদ্যালয় তাড়াতাড়ি বন্ধ করা এবং অনুপস্থিত থাকেন শিক্ষকরা। তবে ভরসা এসব বিদ্যালয়ের পিয়ন।  তারাই চালিয়ে নেন বিদ্যালয়।  দীর্ঘদিন যাবত এই চালিয়ে নেয়ার সিস্টেম মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায়।   এক - দুটি বিদ্যালয় নয়, উপজেলার ৮ টি সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় এমন দূর্নীতির চিত্র চলে আসলেও কর্তৃপক্ষ যেন মৌন চরিত্রের ধারক।   সরজমিন গত ২৩ মার্চ  সকাল ১০ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চরাঞ্চলের ৮ টি বিদ্যালয়ের ৬ টি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ বিদ্যালয় তালা ঝুলে আছে। উপজেলার বাচামারা  ইউনিয়নে সরকারি ১৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী।যমুনা নদীর পূর্ব পাশে ৭ টি এবং পশ্চিম পাশে চরাঞ্চলে রয়েছে  ৮ টি বিদ্যালয় । চরাঞ্চলের বেশিরভাগ বিদ্যালয় দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যেই বন্ধ করে চলে যায় শিক্ষকরা। কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা মাসে চার পাঁচদিন যান।

শুধু পিয়ন দিয়েই চালান বিদ্যালয়। ওইসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কেউ নিজে অসুস্থ, কারও সন্তান অসুস্থ, কেউ সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলেন, কেউ খেয়া পারাপারের কারনে বিদ্যালয় তাড়াতাড়ি বন্ধ করা এবং অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানান। এর মধ্যে ২৯ নং চর ভারেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ টার সময়ও কোন শিক্ষক উপস্থিত নেই। শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের পিয়ন ইমরান হোসেন অফিস কক্ষে বসে আছে।  শিক্ষকরা কোথায় জানতে চাইলে, তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন শিক্ষকরা নাই তো কি হয়েছে আমিতো আছি। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত  প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন আমি আমার স্ত্রী ও একজন নতুন শিক্ষক নিয়ে বিদ্যালয় চালাই। গত বৃহস্পতিবার নতুন শিক্ষক উপজেলায় কাজে গিয়েছিল, আমার সন্তান অসুস্থ থাকায় আমরা দুজন যেতে পারিনি। আপনারা এসেছেন খবর পেয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা হয়নি। ৬১ নং দক্ষিণ চর ভারেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২.৩০ টায় গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ে তালা ঝুলছে।

কোন শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রী উপস্থিত নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিদ সিদ্দিকী বলেন আমি শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকায় এ টিও স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই। অন্য শিক্ষক ছুটিতে ছিলেন। ৮৭ নং নিজ ভারেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১.০০  টার সময় মিলে একই চিত্র। শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী কেউ নেই বিদ্যালয়ে তালা ঝুলছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেছের আলী বলেন খেয়া পারাপারের কারণে আগেই বিদ্যালয়  ছুটি দিতে হয়। সময়মত খেয়া ঘাটে না আসলে পার হওয়া সম্ভব হয় না। আমরা ৫/৬ জন প্রধান শিক্ষক এপার থেকে যাই সবাইকে পারাপারের জন্য আগে আসতে হয়। যদু দূর্গাপুর বিদ্যালয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক উপস্থিত আছেন অন্যান্য কোন শিক্ষক নেই। কিছুদিন আগে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না মর্মে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ এখনও তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না।

এছাড়াও ৯৮ নং সুবুদ্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা ৫জন শিক্ষকের মধ্যে  ১জন সহকারী শিক্ষক খাদিজা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেনে মাসে ৪/৫ দিন বিদ্যালয় আসে। মোঃ শাহ আলম নবী নামে এক ব্যাক্তি বলেন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় আসেনা বললেই চলে।  ও ৭২ নং কল্যানপুর সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। দুপুর ১২ টায় দুই  বিদ্যালয়ে তালা ঝুলানো দেখা যায়। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন আমি স্কুল বন্ধ ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কথা শুনেছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্হা নেয়া হবে। আমরা মোবাইল ভিজিটিং করার কথা ভাবছি। খুব দ্রুত এ কার্যক্রম শুরু করবো।