বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে মনোনয়ন ও জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডা এবং পরস্পরকে উদ্দেশ করে কটূক্তির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের রাজনীতি। ইতিমধ্যে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ।



বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতাকে উদ্দেশ করে বলেন, চার-পাঁচ দিন আগে একজন বেয়াদবের বাচ্চা বলেছে, নাঙ্গলকোটে মোবাশ্বের আলমের কোনো ভোট নেই। সে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গেছিল। তুই বেয়াদব, তুই কীভাবে বিএনপির লোক চিনবি?

মোবাশ্বের আরও বলেন, আমি রাজনীতিতে মেজর জেনারেল, তুই রাজনীতিতে শিশু। মনোনয়ন পাব, না পেলে নাই। কিন্তু এ ধরনের বেয়াদবি করলে কানে আর গালে ঠাসায় মারব।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। সম্প্রতি সুমন বলেন, নাঙ্গলকোটে মোবাশ্বেরের লোকজন নেই। এর প্রতিক্রিয়াতেই মোবাশ্বের ওই বক্তব্য দেন বলে ধারণা স্থানীয় নেতাদের।

তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, একে অপরকে হেয় করে এমন বক্তব্য দলের ঐক্য ও কর্মীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, ‘বক্তব্যের ভাষা আরও মার্জিত হওয়া উচিত ছিল। সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।

এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজির আহমেদ বলেন, এ ধরনের মন্তব্য বিএনপির জন্য বিব্রতকর। একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা কীভাবে এমন ভাষায় কথা বলেন, তা বোধগম্য নয়। এতে দলীয় ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বক্তব্যটি নিয়ে জানতে চাইলে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেন, একজন ব্যক্তি আমাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তিনি যদি আমার রাজনীতিতে এসিআর (পারফরম্যান্স রিপোর্ট) লিখে থাকেন, তাহলে তাকে ঠাসায় মারব, আমি এখনো বলি। আমি রাজনীতিতে মেজর জেনারেল, আমাকে নিয়ে কথা বলার আগে সেটা মাথায় রাখা উচিত।

অন্যদিকে, জাকারিয়া তাহের সুমন বলেন, আমি তাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। যদি করে থাকি, তিনি প্রমাণ দিক। তিনি বলেছেন, তিনি রাজনীতিতে মেজর জেনারেল—তাহলে তিনি অনেক ক্ষমতাবান।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, রাজনীতিতে শালীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কে কার বিরুদ্ধে বলেছেন, তা জানি না। তবে এ ধরনের বক্তব্য দুঃখজনক এবং দলীয় ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।