সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নদীতে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না কোন জাহাজ।

বিগত সময়ে উত্তরবঙ্গে কৃষি উপকরণ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জের
বাঘাবাড়ী নদীবন্দর এলাকাজুড়ে অসংখ্য ডুবচর জেগে ওঠায় ও নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ও মালামাল পরিবহনে পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি। 

বিগত আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় নির্মিত হয় এই নদী বন্দরটি। 
এই নৌবন্দরে শুরুতে প্রথম কয়েক দশক রাসায়নিক সার, জালানি তেল ডিজেল-পেট্রল,কয়লা সহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই কার্গো বা লাইটার জাহাজের ভিড়ে সরগরম থাকত এই বন্দর। 
কিন্তু বর্তমান সময়ে চট্টগ্রাম থেকে আসা সার বোঝাই জাহাজগুলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলার নওয়াপাড়া বন্দরে পণ্য খালাস করে থাকে। এবং সেখান থেকে সড়কপথে ওই সকল কৃষি উপকরণ উত্তরাঞ্চলে পরিবহন করা হয়ে থাকে । নৌপথে নাব্যতার কারনে শুষ্ক মৌসুমে মালবাহী জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না। 

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের মাস্টার ইউসুফ মোল্লা বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে সারবাহী একটি জাহাজ নিয়ে নদীপথে বাঘাবাড়ী বন্দরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। কিন্তু নদীতে  নাব্যতা সংকটের কারণে সেখানে মাল খালাস করতে পারিনি। আরিচা  ঘাটে গিয়ে কার্গোতে মালামাল  খালাস করতে হয়েছে। বাঘাবাড়ী রুটে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ভারী পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করা সম্ভব না হওয়ার কারনে অধিকাংশ শিপিং কোম্পানি এখন এ রুটে চলাচল বন্ধ করে দিয়ে যশোর জেলার নওয়াপাড়া বন্দরমুখী হয়েছে। 
নওয়াপাড়া বন্দরে পণ্য খালাস করে 
উত্তরাঞ্চলে পরিবহন করা হয় 
বলে তিনি জানান । 
মাস্টার ইউসুফ মোল্লা আরও বলেন, নওয়াপাড়া বন্দরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টন মালবাহী কার্গোবাহী জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারে, যা বাঘাবাড়ী বন্দরের পক্ষে সম্ভব না।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ী ঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, পানির সমতল থেকে নৌযানের তলার দূরত্ব অর্থাৎ একটি নৌযানের তলা পানির যতদূর নিচে যায় তাকে ড্রাফট বলাহয়।
শুষ্ক মৌসুমে ৭-৮ ফুটের বেশি ড্রাফট লোড নিয়ে এ বন্দরে কোনো নৌযান ভিড়তে পারে না। সার বহনকারী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ ফুট ড্রাফট লোড নিয়ে চলাচল করে।

বাঘাবাড়ীর বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এই নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার সময় নৌযানের আকার ছোট ও পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত কম ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে  নৌযানের আকার ও ধারণক্ষমতা বাড়লেও এই নৌবন্দরের আধুনিকীকরণ করা হয়নি।
বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের লেবার সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একসময় এই বন্দরে ৪০০-৫০০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। 

কিন্তু বর্তমানে বাঘাবাড়ি নদীতে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে নৌবন্দরে  কোন জাহাজ ভিড়তে না পারায় 
বন্দরে কাজ না থাকায় এখন অনেকেই বন্দর ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকেছেন। এখন ১০০-১৫০ জন শ্রমিক থাকলেও তাদের আয় যথেষ্ট নয়। বন্দরে সার পরিবহন প্রায় বন্ধ থাকায় বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) গুদামে এখন সার আনা হচ্ছে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে। তবে সেগুলোও সময়মতো পৌঁছায় না বলে অভিযোগ গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আনসারীর। 
তিনি বলেন, জানুয়ারিতে সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০ হাজার ২৮১ টন সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মজুত রয়েছে সাত হাজার ৭৩৪ টন সার। শুধু এই সার না, শুষ্ক মৌসুমে বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল পরিবহনেও সংকট তৈরি হয়।
বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা তেল ডিপোর কর্মকর্তা আবুল ফজল বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে ঝুঁকি থাকায় তাদের আট থেকে নয় লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে হচ্ছে। বড়াল নদীর চ্যানেলটি উন্নত করা হলে পূর্ণ ক্ষমতার জাহাজই বন্দরে খালাস করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর ছিল। এই বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে একটি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবং প্রকল্পের কাগজপত্র ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলেই সকল সমস্যা দূর হবে বলে তিনি জানান।