সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ (নিটার)-এ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দাবিতে চলমান শোষণমুক্ত শিক্ষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নিটার কনফারেন্স রুম (AD 202) - এ আয়োজিত এই শুনানিতে তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত ১৪ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পর্যালোচনা করে। তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবির।
গণশুনানিতে নিটারের ১০ম থেকে ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে তাদের ওপর সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন নিটার অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর আহ্বায়ক ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ, ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ (যিনি দিল্লির আইআইটি থেকে অনলাইনে যুক্ত হন) এবং ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিয়াম ইবনে আলম।
গণশুনানির একপর্যায়ে নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের হৃদয়বিদারক বর্ণনায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন -
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার;
একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম;
শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নিপীড়নের অভিযোগ সাবেক অধ্যক্ষ ও উপদেষ্টা ড. মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ শিক্ষার্থীদের দায়ের করা অভিযোগে উঠে আসে, এবং অভিযুক্ত ১৪ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ড. মো. মিজানুর রহমানকে নির্দোষ প্রমাণ করা বিশেষভাবে উঠে আসে। এছাড়াও উঠে আসে, নিটার প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার লঙ্ঘন করে আসছে, ফলে প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু শিক্ষা পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তদন্ত কমিটির প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মর্মস্পর্শী বক্তব্য শুনে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক উপমা কবির গভীরভাবে মর্মাহত হন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুনানির শেষে তিনি বলেন—
"শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় এবং শিক্ষার পরিবেশ সঠিক পথে ফেরাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে এবং চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।"
নিটার শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক এবং নিটারে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও গণশুনানির এই ঘটনা শিক্ষাঙ্গনের অনিয়ম ও দূর্নীতি রোধে নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং নিটারের শিক্ষার মান উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেয় তা নিয়ে সকল শিক্ষার্থী অপেক্ষমান আছেন।