নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) এবার শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সিজিপিএ’র ভিত্তিতে ছাত্র পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) এবার শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সিজিপিএ’র ভিত্তিতে ছাত্র পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্ত প্রকাশের পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সরাসরি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা সিদ্ধান্তটিকে “একপাক্ষিক”, “অযৌক্তিক” এবং “ঠুনকো” বলে উল্লেখ করেন।

১২ জুন বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তামজিদ হোছাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি ১৮ সদস্যের ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ছাত্র পরিষদ’ গঠন করা হবে। এতে থাকবেন তিনজন উপদেষ্টা এবং বাকি সদস্যরা মনোনীত হবেন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে, যাদের নির্বাচন করা হবে তাদের বার্ষিক সিজিপিএ (YCGPA) এর ভিত্তিতে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উপদেষ্টা পরিষদ সংশ্লিষ্ট অনুষদ ও ইনস্টিটিউট থেকে সদস্য মনোনীত করবেন। সদস্যদের মেয়াদ হবে দুই টার্ম বা এক বছর, এবং আহ্বায়ক ও সদস্য-সচিব মনোনীত হবেন যথাক্রমে চতুর্থ ও দ্বিতীয়/তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। তবে একই বিভাগ বা ইনস্টিটিউট থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য-সচিব মনোনয়ন দেয়া যাবে না।

তবে এই পুরো প্রক্রিয়াকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন বলেন,

“নোটিশে পরিষদের কাজ কী হবে তা পরিষ্কার নয়। যদি শুধু শিক্ষা ও গবেষণার বিষয় হয়, তাহলে সিজিপিএ ভিত্তি কিছুটা মানা যায়। কিন্তু সার্বিক প্রতিনিধিত্বের জন্য এটি যথেষ্ট নয়। ছাত্র সংসদের বিকল্প গড়ার উদ্দেশ্যে হলে সেটি বিপজ্জনক প্রক্রিয়া।”

সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুধা বড়ুয়া বলেন,

“ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায়, ব্যাচভিত্তিক কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। মানদণ্ড ও কাজের পরিসর না জানিয়ে কেবল সিজিপিএ দেখে কাউন্সিল গঠন গ্রহণযোগ্য নয়।”

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল জুবায়ের বলেন,

“একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ও একজন যোগ্য প্রতিনিধি — এই দুই ভূমিকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়া গঠিত ছাত্রপরিষদ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

বহু শিক্ষার্থী মনে করছেন, এটি একটি “ছাত্র সংসদের বিকল্প” হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা। তাদের মতে,

“শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক প্রতিনিধি পরিষদ গঠনে সিজিপিএ বিবেচ্য হতে পারে, কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ ছাত্র পরিষদের ভিত্তি কখনোই কেবল সিজিপিএ হতে পারে না।”

বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে এবং বাস্তবিকভাবে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের মৌলিক অধিকার হরণ করতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসনের উচিত এই প্রক্রিয়াটি পুনর্বিবেচনা করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামো তৈরি করা।