প্রতি বছরই ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজি জাতীয় ফসল তোলা হয়। কিন্ত ওই সময় আমদানি প্রচুর পরিমানে হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় না। এদিকে বর্তমানে বর্ষার শেষে বাজারে সবজির অপর্যাপ্ততার কারনে দামও বেশি, চাহিদাও থাকে বেশি। সব কিছু মাথায় রেখে আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
দেশের সবজি ভান্ডার খ্যাত পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়েছে। এখনও শীত মৌসুম শুরু না হলেও এখানকার চাষিরা কিছু কিছু শীতের সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছে। উপজেলায় বিভিন্ন মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি। বাজারেও উঠেছে কিছু আগাম শীতকালীন সবজি। তবে দাম অনেক চড়া।
আমদানি কম, দাম বেশি এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, লাউ, লালশাক, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি আগাম শীতকালীন সবজি। উঁচু জমিগুলোতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন, এতে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের। ভালো দাম পাওয়ার আশায় তারা শীতের আগেই যাতে শীতকালীন সবজি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে। সেই প্রচেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। এতে চাষিরা প্রতিবছরই লাভবান হচ্ছেন। ‘সবজির আগাম চাহিদা মাথায় রেখে ফলানো হচ্ছে নানান জাতের সবজি।
১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে সোনাহার ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাড়া গ্রামে দেখা মেলে কৃষক ধরনী রায়ের সাথে। ফুলকপির চারাগাছগুলোতে স্প্রে করছেন। এসময় তিনি জানান, এবার ৫০ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের কপি চাষ করবেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কপি বাজারজাত করতে মোট খরচ হবে প্রায় ৩৫-৪৫ হাজার টাকা। তিনি কপির পাশাপাশি লাউ ও বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বললেন, গত বছর এই জমিতেই ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছিলাম। এবারও ভালো কিছু আশা করছি।
একই ইউনিয়নের বেড়া প্রধান পাড়া সবজি চাষী দয়াল চন্দ্র রায় বলেন, "এবার ৬০ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চারা রোপন করেছেন।মাস দেড়েকের মধ্যেই সে গুলো বাজারজাত করতে পারবেন এবং দামও ভালো পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, "যে কোনো সবজি যদি মৌসুমের শুরুতে বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম বেশি পাওয়া যায়। এরই মধ্যে আগাম জাতের শিম, মুলা, লালশাক, পুঁইশাক,বরবটি,শসা উঠতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত দামও পাচ্ছেন কৃষকেরা"।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ নাঈম মোর্শেদ বলেন, "আগাম সবজি চাষে ২৬০ হেক্টর ও রবি মৌসুমে ১১২০ হেক্টর ধারনা করা হচ্ছে। আগাম সবজি চাষ লাভজনক। যেকোনো সবজি যদি মৌসুমের আগে বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম বেশি পাওয়া যায়। তাই অনেক চাষি আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন জেলায় যায়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও রোগবালাই দূর করার জন্য সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে"।