চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ওমানপ্রবাসী জমির দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিদেশে কর্মরত। তিনি বছর বছর দেশে এলেও, এবার ফেরার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলেন তার কষ্টের অনুভূতি।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, "এবারের ওমান যাত্রাটা খুবই কষ্টদায়ক। ১৬ বছরের ওমান জীবনে এমন অনুভূতি হয়নি। বিশেষ করে মাকে রেখে আসা ও সন্তানের চোখের পানি সহ্য করা কঠিন। বুক জড়িয়ে তাদের আদর খুব মিস করব। আল্লাহর উপর ভরসা করে যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন।"
জমিরের এই আবেগঘন স্ট্যাটাস প্রমাণ করে, পরিবার থেকে দূরে থাকার বেদনা কতটা কঠিন। যদিও জমিরের মতো সবাই নিয়মিত দেশে ফিরতে পারেন না। ভিসা জটিলতা, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে অনেক প্রবাসী বছরের পর বছর দেশে আসতে পারেন না।
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই দেশে ফিরে হতাশায় পড়েন। কারণ, অনেকের নিজ নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও সঞ্চয় থাকে না। পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো অর্থ প্রবাসী নিজে আর ফেরত পান না। ফলে দেশে ফেরার পর নানা বিড়ম্বনার শিকার হন।
এমনকি, অনেক প্রবাসী একাকিত্ব, মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগেন। কিছুসংখ্যক হতাশায় আত্মহননের পথও বেছে নেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। ঢাকার পরেই চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে, যার বড় অংশ আসে ফটিকছড়ি থেকে। এখানকার প্রবাসীদের টাকায় বহু ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়নমূলক কাজ গড়ে উঠেছে।
প্রবাসীদের বিনিয়োগে পরিচালিত সংগঠন ‘প্রবাসী ভিশন’ এর সমন্বয়ক ইকবাল হোসেন বলেন, "ফটিকছড়ির অর্থনৈতিক চিত্র বদলে গেছে প্রবাসীদের কারণে। কিন্তু তাদের জন্য সরকারি সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।"
সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিলেও প্রতারিত হওয়ার ঘটনা বন্ধ হয়নি। কাতার প্রবাসী মাসুম বিল্লাহ বলেন, "প্রবাসীদের আইনি সহায়তা আরও জোরদার করা উচিত, যাতে দালালচক্রের প্রতারণা বন্ধ হয়।"
এদিকে, দুবাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রেখে কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়া শেখ সুমন বলেন, "প্রবাসীদের বিমান ভাড়া সিন্ডিকেট বন্ধ করা, ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো ও বিনিয়োগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।"
সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রবাসীদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে তাদের জীবনযাত্রা আরও সহজ হবে।