ছাত্রদলের যেসব নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

এর পরে রয়েছেন শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানুল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রকিবুল ইসলাম বকুল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সাইফুল আলম নীরব, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মীর সরফত আলী সপু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কামরুজ্জামান রতন, আশফাক হোসেন, রফিকুল আলম মজনু, মাহবুবুল হক নান্নু, মোতাহার হোসেন, এমএ মজিদ, হাসান জাফির তুহিন, মিজানুর রহমান মিজান, এমএ খালেক, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আলিমুজ্জামান আলীম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, শিরিন সুলতানা, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, রেহানা আক্তার রানু, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আক্তার, নিলোফার চৌধুরী মনি, হায়দার আলী লেলিন, হাসান মামুন, মামুন হাসান, এসএম জিলানী, রাজিব আহসান, এসএম জাহাঙ্গীর, হাবিবুর রহমান হাবিব, আকরাম হোসেন, নাসিমুল হাসান, আলিমুজ্জামান শিমুল, সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব, হারুন অর রশিদ, আব্দুল হামিদ, আনিসুর রহমান খোকন, ইসহাক সরকার, মোস্তফা খান সফরি, জাফর ইমাম, মিয়া নুরুদ্দিন অপু, আব্দুল মতিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল), জয়ন্ত কুণ্ডু, তরুণ কর্মকার, জি কে গউছ, শামীম তালুকদার, এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, সেলিমুজ্জামান সেলিম, রবিউল ইসলাম নয়ন।

এদিকে সাবেক নেতাদের মতো বর্তমান কমিটির ছাত্রনেতারাও আসন্ন নির্বাচনে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনয়ন চাইবেন। এ তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া এবং সহসভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ হিরা, রেজোয়ানুল হক সবুজ ও আবু সুফিয়ান।


এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতিসহ সাবেক ১৫ সভাপতি মনোনয়ন চাইবেন। তারা প্রত্যেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে সবাই যার যার নির্বাচনি আসনে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।


সংগঠনটির ১৯৮৫ থেকে ’৮৬ পর্যন্ত দুই বছর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে তিনি এই আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৮৭-৯০ মেয়াদে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বর্তমানে তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।


মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনে প্রস্তুতি হিসেবে গতানুগতিক কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আমরা মানুষের চাহিদা জানার চেষ্টা করছি। আমরা দেখেছি মানুষ চায় আশ্বাস নয়, বাস্তবে জনপ্রতিনিধিরা তাদের জন্য কী করতে পারবে সেটা। সেই লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জের মানুষ এখানে বালু উত্তোলন হোক তা পছন্দ করে না। আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে তা বন্ধ করেছি। মুন্সীগঞ্জে মাদকের উৎপাত অনেক বেশি, সেটি বন্ধে আমরা সামাজিক আন্দোলন করেছি, তাতে সফল হয়েছি। এভাবে এলাকায় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


মনোনয়ন পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ-২ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার একমাত্র হকদার আমি। কারণ বিএনপির সবচেয়ে দুর্যোগকালীন সময়ে দলের হয়ে কাজ করেছি। কখনো দল ছেড়ে যাইনি বা ভয়ে নিষ্ক্রিয়ও থাকিনি। দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, সে দায়িত্ব পালন করেছি।


১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ছিলেন আমানউল্লাহ আমান। তিনি ডাকসুর ভিপি ছিলেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের শীর্ষ নেতা ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি কয়েকবারের এমপি ছিলেন। এবারও প্রার্থী হচ্ছেন।


১৯৯২ সালের ১৬ মে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি পদে জয়ী হন রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। মাঠ কাঁপানো এই ছাত্রনেতা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপি। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ আসন কিংবা ঢাকা-১৩ আসন থেকে তার নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। রিজভীর একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে কুড়িগ্রাম, রাজশাহী অথবা ঢাকার মোহাম্মদপুর সংসদীয় আসন ১৩-এর যে কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এক্ষেত্রে দল থেকে যেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেখান থেকে নির্বাচন করবেন তিনি। তবে ঢাকা থেকে নির্বাচন করার সম্ভাবনাই বেশি।


১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন ফজলুল হক মিলন। সাবেক এমপি ও বর্তমানে বিএনপির গাজীপুর জেলার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। গাজীপুর-৫ আসন থেকে তার নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগেও তিনি এই আসনে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।


১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি এবারও লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এলাকায় নিয়মিতভাবে নির্বাচনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।


মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা মীর সরফত আলী সপু আমার দেশকে বলেন, প্রতিনিয়ত এলাকায় সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এলাকায় ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। মানুষ ভোটের জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষায় আছে। দলের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে গত ১৫ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলাম। পাশাপাশি এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। আমার বিশ্বাস, দল এবার সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে।


হাবীব উন নবী খান সোহেল ২০০০ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা ঢাকা থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-৯ (রমনা) আসনে প্রার্থী হতে পারেন তিনি।


খুলনা-৩ আসনে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল প্রার্থী হবেন। তিনি ইতোমধ্যে ওই আসনে নির্বাচনি প্রচার শুরু হরেছেন।


এ ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আমার দেশকে তিনি বলেন, আমি কর্মিবান্ধব মানুষ। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আছি। দল চাইলে আমি ধানের শীষের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনব। আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিদিন সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছি।


মাদারীপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক ছাত্রদল নেত্রী হেলেন জেরিন খান। ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি। আমার দেশকে তিনি বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে যেমন দলের প্রয়োজনে কাজ করেছিÑএখনো ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে দলের প্রয়োজনে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে আমার নির্বাচনি আসনের মানুষের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।


২০০৩-০৪ সেশনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি ছিলেন আজিজুল বারী হেলাল। তিনি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন। খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বাগেরহাট থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।


২০০৯ থেকে ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। পরে তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান বলে জানা গেছে।


২০১২ থেকে ২০১৫-এর শুরু পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। পরে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এই সাবেক ছাত্রনেতা এবার নরসিংদী-৪ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।


২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রাজীব আহসান। আর একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান। সাবেক এই দুই ছাত্রনেতার মধ্যে রাজীব আহসান বরিশাল-৪ এবং আকরামুল হাসান নরসিংদী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রত্যাশায় রয়েছেন।


জানতে চাইলে রাজীব আহসান বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকে ছাত্রদল করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছি। সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়েও দায়িত্বে ছিলাম। বিগত ১৭ বছরে রাজপথের প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে দায়িত্বে ছিলাম। সেই জায়গা থেকে আমরা যথাসাধ্য কাজ করেছি। এসব করতে গিয়ে মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। একই সঙ্গে দলের ভাবমূর্তি যেন সমুন্নত থাকে, সে লক্ষ্যেও সব সময় কাজ করেছি। আশা করি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের দলের যতটুকু ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটা নিয়েও কেউ কথা বলতে পারবে না। গত ১০ মাসে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো কাজে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, এমন অভিযোগও কেউ করতে পারবে না। এখন পর্যন্ত কেউ করেছে বলেও শুনিনি।’


রাজীব আহসান আরো বলেন, ‘তরুণ নেতৃত্বের কথা দল সব সময় বলে আসছে, সেই জায়গা থেকে জাতীয় নির্বাচনে আমি আমার জন্মস্থানের নির্বাচনি আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আশা করি আমি জনগণের সঙ্গে যতটুকু কাজ করেছি, এলাকার মানুষের সঙ্গে যতটুকু সম্পৃক্ত আছি, সেই সঙ্গে আমার পারিবারিক অবস্থান, রাজনৈতিক অবদানÑসেটিই মানুষ মূল্যায়ন করবে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। এটাই আমার বিশ্বাস। সেই জায়গা থেকে কাজ করতে চাই এবং আশা করছি দল এ বিষয়গুলো মূল্যায়ন করবে।’


মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আকরামুল হাসান আমার দেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি মাত্র দল বিএনপি, যে দল তারুণ্যের শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করে। তরুণ শক্তি প্রতিবারই দেশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখিয়েছে। সবশেষ জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জাগরণ সৃষ্টি করে তরুণরা। আমাদের বিশ্বাস তরুণরাই আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করবে।’


২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ফজলুর রহমান খোকন আর সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন ইকবাল হোসেন শ্যামল। তারাও এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এই দুই সাবেক ছাত্রনেতাও এবার নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে খোকন বগুড়া-৫ আর শ্যামল নরসিংদী-৫ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই কমিটির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নাওয়াজ নোয়াখালী-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।


২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্রদলের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আর সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল। দুজনই আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ যশোর-৬ আর সাইফ মাহমুদ জুয়েল বরিশাল-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।


এ ছাড়া ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি বর্তমান নেতারা আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।


মনোনয়নের প্রত্যাশার বিষয়ে সাইফ মাহমুদ জুয়েল আমার দেশকে বলেন, ‘বিএনপির দুর্যোগকালে আমরা ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলাম। এ সময় ছাত্রদলের নেতৃত্বে সারা দেশে তারুণ্যের জোয়ার সৃষ্টি হয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্রদল। দেশের মানুষ এখন তারুণ্যের হাতে নেতৃত্ব দেখতে চায়। মানুষের চাওয়ার সঙ্গে আমরাও বিশ্বাস করি আমাদের দল বিএনপি এবার তরুণদের মাধ্যমে আগামী বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’


এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের নির্বাচিত ভিপি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল)।


ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ময়মনসিংহ-৫ আর নোয়াখালী-৫ আসন থেকে মনোয়ন চাইবেন সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। ইতোমধ্যে নাছির উদ্দিন নাছির নিজ সংসদীয় আসনে নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দল যেভাবে দায়িত্ব দিয়েছে সেভাবে পালন করেছি। সে বিবেচনায় আগামীতে দেশ গঠনে আমরাও অংশীদার হতে চাই। সেজন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছি। কিন্তু দল যদি আমাকে বিবেচনা করে তাহলে নির্বাচন করব আর যদি অন্য কাউকে দেয় তার পক্ষে কাজ করব।’


জানা গেছে, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া বান্দরবন, সহসভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন সুনামগঞ্জ-১, মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ হিরা কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রেজোয়ানুল হক সবুজ বাগেরহাট-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।


আগামী নির্বাচনে তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মূল্যায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, ‘নেতৃত্ব তুলে আনতে হলে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। আমরা আর কত?’ তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হতে যোগ্যতার প্রয়োজন। তারপর বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল কি না, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাদের কতটা অবদান ছিল, দলের পেছনে কতটা সময় দিয়েছেÑএ বিষয়গুলো বিবেচনায় যারা ফিট হবেন, তাদের প্রার্থী করা হবে।


প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতাই সবকিছু নয়। পিএইচডি করেছে বলে আমরা কাউকে এমপি বানিয়ে দেব, এটা যেমন ঠিক নয়; তেমনি কম লেখাপড়া করেছে কিন্তু অনেক গুণ আছে, রাজনীতিতে অবদান আছে, এলাকায় মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে (বলেই) আমি তাকে এমপি বানাব না, সেটা হতে পারে না। রাজনীতিতে যোগ্যতা, মেধা, গ্রহণযোগ্যতা এগিয়ে নিয়ে আসবে। দেশ গড়তে হলে মেধাবী রাজনীতিবিদ লাগবে।’