বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে জাহানারা বেগম লোটন (৫০) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে লাশ উদ্ধার নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় চরমোনাই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ রাজারচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে জাহানারা বেগম লোটন স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে স্বজনদের রাত ১০ টায় খবর দেয়া হয়।
নিহত জাহানারা বেগম লোটন ওই গ্রামের দলিল উদ্দিন ধলু বকসির স্ত্রী।
নিহতের বোনের মেয়ে সুমার অভিযোগ- মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে তিনি তার খালা জাহানারা বেগম লোটন স্ট্রোক করে মারা গেছেন জানতে পেরে ওই বাড়িতে ছুটে যান। তিনি গিয়ে দেখতে পান তার খালার গলায় কালো দাগ, হাত ভাঙা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন। সেটা দেখে তিনি সন্দেহ পোষন করে সাথে সাথে লোটনের মামাদের বিষয়টি জানান। পরে তারাও গিয়েও গলার কালো দাগ, হাত ভাঙা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন দেখতে পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। এদিকে লোটনের স্বামী ধলু বকসি তড়িঘড়ি করে রাতেই লাশ দাফনের পায়তারা চালালে লোটনের মামাদের সন্দেহ আরো গভীর হয়। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে আসেন কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশের একটি টিম। তারা গিয়ে লোটনের মেয়ে এলিজার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও সুমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেয়। তখন পুলিশ এলিজাকে রাতেই লাশ দাফন করতে বলে। অন্যদিকে সুমাকে লাশ দাফন না করে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটনের আশ্বাস দিয়ে চলে আসেন। ওই রাতে দুই পক্ষের রেষারেষিতে লাশ দাফন করতে পারেনি।
নিহতের মামা ইয়াকুব আলী মৃধা অভিযোগ করে বলেন- আমরা পরদিন সকালে খবর পেয়ে ছুটে যাই। বেলা ১১ টার দিকে সেখানে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান আসেন। এসেই লোটনের স্বামী, ছেলে ও মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলেন। এরপর ৫ লক্ষ টাকার বিনিময় বিষয়টি মিমাংসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে আমরা রাজি না হলে দুপুর ২ টার পর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই রাতে আমরা মামলা করতে থানায় গেলে সেখানে কথা হয় কনস্টেবল নজরুলের সাথে। তখন জানতে পারি সুরাতাহাল রিপোর্টে ভূল তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। এ সময় আমরা তার কাছে ভূল রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাদের থানা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং উচ্চস্বরে বলতে থাকেন সুরাতাহাল রিপোর্ট দিয়ে কি আসে যায়, আমি ডাক্তারের সাথে থাকবো, আমি যেভাবে বলবো রিপোর্ট সেভাবেই বের হবে।
ইয়াকুব আলী মৃধা বলেন- পরদিন আমরা হাসপাতালের মর্গের সামনে গেলে সেখানে বসেও ফের আমাদের সাথে দুরব্যবহার করেন কনস্টেবল নজরুল। তখন তিনি টেবিল চাপরে আমাদের শাসাতে শুরু করেন এবং বলেন- আপনারা এখানে কেন এসেছেন, আপনাদের এখন আটক করা হবে। এরপর তিনি থানার ওসি (অপারেশন) গাজী মিজানুর রহমানকে কল করেন। তিনি এসেই আমাদের গ্রেপ্তাররে হুমকি দেন। এ সময় কয়েকজন সংবাদকর্মী ছুটে আসলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা না বলে তাদেরকেও হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে লাশ ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য কনস্টেবল নজরুল আমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিলেও লাশ আমাদরে না দিয়ে তার ছেলে ও মেয়ে কাছে দিয়ে দেয়। আমাদের ধারণা- তার পরিবারের লোকজনই তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা না নিলে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ইয়াকুব আলী মৃধা।
হাসপাতালের মর্গের সামনে ঘটা ঘটনার ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
নিহতের মেয়ে এলিজা বলেন- আমি খবর পেয়ে রাত ১১ টার দিকে এসে দেখি আমার মা মারা গেছেন। পরে শুনতে পাই মা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরআগে মায়ের সাথে বাবার সামান্য বিষয় নিয়ে ঝড়গা হয়েছিল। কিন্তু এই সামান্য কারণে মা আত্মহত্যা করবে ভাবতে পারিনি। এর বাইরে কিছু ঘটলে ময়নাতদন্তে বের হয়ে আসবে।
নিহতের স্বামী দলিল উদ্দিন ধলু বকসি বলেন- আমি তারাবির নামাজ শেষে চা খাচ্ছিলাম, তখন আমার ছেলে কল দিয়ে আমাকে বাসায় ডাকে। বাসায় গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী মারা গেছেন। প্রথমে আমাকে আত্মহত্যার বিষয়টি জানানো হয়নি। পরে জানতে পারি সে বাড়ির পাশে আম গাছে সাথে গলা ফাঁস দিয়েছে। এর বেশি কিছু ঘটলে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে জানা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে এসআই মোস্তাফিজের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। এমনকি থানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন- যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে ভূক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।