ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের ওপর হামলা চালানো হয় এবং তার গাড়িবহরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উপজেলার সমীর উদ্দিন স্মৃতি মহাবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত চারজন আহত হন। ঘটনার পর এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিএনপির দলীয় সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ২টা থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। এতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ তিনটি পদের জন্য মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ৪৯৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
ভোটগ্রহণ শেষে গণনা চলাকালে স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তবে সন্ধ্যা ৭টার পরেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠে, জেলা বিএনপির নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল আটকে রেখে টালবাহানা করছিলেন এবং কারচুপির চেষ্টা চলছিল।
নেতাকর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম (ছাতা মার্কা) ২৪৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু হায়াত নুরুন্নবী (চেয়ার মার্কা) পান ২৪০ ভোট। মাত্র ৪ ভোটের ব্যবধানে এই ফলাফল হলেও তা প্রকাশে বিলম্ব ও গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়, যা থেকে উত্তেজনা আরও বাড়ে।
রাত প্রায় ৯টার দিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন দীর্ঘ অবরুদ্ধ অবস্থার পর কাউন্সিলের ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফল ঘোষণার পর তিনি গাড়িতে উঠতে গেলে উত্তেজিত উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়। তারা তার দিকে চেয়ার, বাঁশ ও লাঠি ছুড়ে মারে এবং তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিতে ভাঙচুর চালায়।
ভিডিও ফুটেজেও দেখা যায়, মির্জা ফয়সাল আমিনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি চেয়ার ছুড়ে মারা হয়। তিনি গাড়িতে উঠতে গেলে হামলাকারীরা গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। এ সময় তার সফরসঙ্গী ও গাড়ির মালিক মো. রাশেদ বলেন:
"ভাইয়া (মির্জা ফয়সাল) এবং আমি এই গাড়িটি দিয়ে নিয়মিত চলাফেরা করি। আজকেও আমরা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে এসেছিলাম। সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। কিন্তু ফলাফল ঘোষণা করে ভাইয়া যখন বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তার ওপর অতর্কিত হামলা হয়। আমার গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়েছে।"
হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বালিয়াডাঙ্গী থানার পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে ততক্ষণে হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শওকত আলী সরকার বলেন:
"ফলাফল ঘোষণার পর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাড়িতে উঠতে গেলে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। তবে কারা এই হামলা চালিয়েছে তা এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন:
"উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে একটি হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এ সময় কয়েকজন আহত হয় এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে। আমরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।"
এ ঘটনার পর অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের কারণে এমন সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।