বিরিয়ানি খেতে গিয়েই ‘মশলা’ এমন মাখলো যে টিকটকার প্রিন্স মামুনকে খালি হাতে ঢাকায় ফিরে যেতে হলো! স্থানীয় জনতা, ওলামা ঐক্য পরিষদ এবং খেলাফত মজলিসের ‘গার্নিশিং’ এমনই ছিল যে, বিরিয়ানি হাউজের রিবন কাটার আগেই গুছিয়ে ফেলতে হয় ব্যাগপত্র।

গত সোমবার (১৪ জুলাই) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিকদার মার্কেটে “নান্না বিরিয়ানি হাউজ” এর জমকালো উদ্বোধনের কথা ছিল জনপ্রিয় (বা বলা চলে বিতর্কিত!) টিকটকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের। ঢাকায় বসে লাল কার্পেট স্বপ্নে বিভোর মামুন রওনা দিয়েছিলেন বিরিয়ানির শহরে, কিন্তু স্থানীয়দের চোখে তিনি যেন ছিলেন বিরিয়ানির সাথে ‘পঁচা আলু’। ফলে, বিকেল তিনটায় কাশিয়ানী পৌঁছালেও উদ্বোধনের ফিতা কাটা তো দূরের কথা, ফিতাই খুঁজে পাননি।

একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনে টিকটকার ডেকে এমন হইচই কেন? কারণ প্রিন্স মামুনকে নিয়ে স্থানীয়দের আপত্তির শেষ ছিল না। উপজেলা জুড়ে কয়েকদিন ধরে বিরিয়ানি হাউজ কর্তৃপক্ষ লিফলেট বিলি করে মামুনের আগমন নিয়ে উত্তেজনার খই ফুটালেও, উল্টোদিকে ওলামা ঐক্য পরিষদ ও খেলাফত মজলিসসহ সাধারণ মানুষ তাকে “উপজেলায় অবাঞ্ছিত” ঘোষণা করে থানায় একের পর এক আবেদন জমা দেন।

তাদের দাবি? মামুন নাকি চরিত্রহীন, এবং তাঁর ভিডিওগুলোতে এমন সব ‘কালচারাল ম্যাজিক’ থাকে যা দেখে যুব সমাজ পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক কথায়, “বিরিয়ানির চেয়ে বিষাক্ত টপিং!” এমনটাই মনে করেছেন স্থানীয়রা।

কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, “তার কালচার তো ভালো না। জনতা ক্ষিপ্ত ছিল। আমরা পরিস্থিতি বুঝে বিরিয়ানি হাউজ কর্তৃপক্ষকে জানাই যেন আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন না ঘটে। এরপর তারা নিজ থেকেই প্রোগ্রাম বাতিল করে দেয়।”

অর্থাৎ, মামুন যেন আসতে না পারে, তার জন্য পুলিশ ‘গুড়ের মতো মিষ্টি ভাষায়’ অনুরোধ করে পরিস্থিতি ‘ঝাল’ হওয়ার আগেই ঠান্ডা করে দেয়।

কাশিয়ানী উপজেলা ওলামা ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল করীম আরও রসালো মন্তব্য করেন:
“মামুন তো চরিত্রহীন। টিকটক করে ছেলে-মেয়েদের নষ্ট করছে। তার মতো লোক এলে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমরা একযোগে তার আগমন ঠেকিয়েছি।”

এই বক্তব্যে বোঝা যায়, শুধু বিরিয়ানি নয়, কাশিয়ানীতে এখন চরিত্রের ওজনও আলাদা করে মাপা হচ্ছে।

এদিকে বিরিয়ানি হাউজের মালিক পক্ষ যেন পুরো ঘটনার জন্য কাঁচা মরিচ খেয়ে বসেছিল! মালিকের ভাই মনির হোসেন বলেন,
“মামুন ভাঙ্গা পার হয়ে প্রায় মুকসুদপুর পর্যন্ত চলে এসেছিল। পরে সে নিজস্ব সমস্যার কথা জানিয়ে প্রোগ্রাম বাতিল করে।”

মানে, বিরিয়ানি নিয়ে কেউ ঝাল খেলো, কেউ গিলতেই পারলো না!

পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রিন্স মামুন ছিলেন একেবারে ‘নীরব ভাজি’। তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। হয়তো তিনি এখন নতুন কোনো বিরিয়ানি স্পটে ডিল করছেন, যেখানে বাঁধা নেই—শুধুই চাটনি আর লাইভ ভিডিও।

বিরিয়ানির দোকানে টিকটকার ডাকার যুগে ঢাকঢোল যেমন বেজে উঠে, তেমনি বেজে উঠে বিরোধিতার ঢাকও। প্রিন্স মামুন হয়তো নিজের ভিডিওতে ‘ড্রামাটিক রি-অ্যাকশন’ দেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি কাশিয়ানী থেকে সোজা ঢাকায় ‘রিট্রিট’ করেন চুপচাপ। একেই বলে, “বিরিয়ানি না খেতে গিয়ে চরিত্রের ঝাল খাওয়া!”