দীর্ঘ দেড় বছর পর দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে নষ্ট হওয়া ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন চালু করলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত নিরাপদ করতে ২০২০ সালে বেনাপোল বন্দরে স্ক্যানারগুলো বসায় কাস্টমস। কিন্তু যান্ত্রীক ত্রæটির কারনে দীর্ঘ ১৮ মাস মেশিন গুলো নষ্ট থাকায় নিরাপদ রুট হিসাবে স্বর্ন চোরাচালানসহ নানা অনিয়ম হচ্ছিল এই বন্দরে। দীর্ষ প্রতিক্ষার পর পূনরায় স্ক্যানার ম্যাসিন চালু করলো বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ভারতগামী যাত্রী চলাচল সহজীকরণ ও দ্রæত সেবা প্রদানের জন্য বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন-কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে তিনটি স্ক্যানিং মেশিন মেরামত করা হয়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্টরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চারটি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে। এর একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন করা হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশদ্বারে। অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়াও নিরাপদ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বেনাপোল কার্গো ভেহিক্যাল বন্দরে বসানো হয়েছে নতুন স্ক্যানিং মেশিন, যা পরীক্ষাম‚লক কার্যক্রম শেষে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও গত তিন মাসে একটি ট্রাকও স্ক্যানিং করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে, অন্যদিকে নিরাপদ বাণিজ্য পড়েছে সরাসরি ঝুঁকিতে। এই দুটি স্ক্যানার দ্রæত চালু করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ব্যবস্থাপক বনি আমিন জানান, বেনাপোল বন্দরে ৪টি স্ক্যানার মেসিন যান্ত্রিক ক্রুটি ধরা পড়লে গত ১৮ মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। স্ক্যানিং মেশিন মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন ছিলো যা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বহন করেনি এর আগেও কয়েকবার নষ্ট হয়েছিল স্ক্যানিং মেশিনগুলো। নতুন করে এনবিআরের সহয়তায় স্ক্যান মেসিনগুলো চালু করা হয়েছে।
ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রী সেলিম রেজা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কাস্টমসের স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় অবাধে ভারতে মূল্যবান সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছিল। ফলে চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ কাস্টমস অনেকটা অসহায় পড়ে পড়েছিলো। স্ক্যান ম্যাসিন চালু হওয়াতে আবারও অবৈধ পণ্য চোরাচালান কমে আসবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ ব্যাবসায়ী মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ব্যাগেজ স্ক্যানার চালুর ফলে পাসপোর্ট যাত্রীরা দ্রæত ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারবে। এছাড়াও দীর্ঘ মাস যাবৎ স্ক্যানিং মেশিন নষ্টের সুযোগে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে চোরাচালানকারীরা অতিরিক্ত পণ্য প্রবেশ করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। স্ক্যানিং বন্ধ থাকায় এ দেশ থেকে স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ পাচার হচ্ছে ভারতে। বাণিজ্য নিরাপদ রাখতে ব্যাগেজ স্ক্যানিং এর মত কার্গো ভেইকেল টার্মিনাল ও বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশদ্বারের মোবাইল স্ক্যানার চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার শরিফুল হাসান বলেন, দীঘ মাস যাবৎ যান্ত্রিক ত্রæটির কারনে বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনের স্ক্যানার মেশিন নষ্ট ছিলো আমরা সবগুলো সচল করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে আইসিপি ডিপার্চারে ব্যাগেজ স্ক্যানিং, আর্চওয়ে মেশিন এবং মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে পরীক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়াও বাইপাসে স্থাপিত বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কন্টেইনার স্ক্যানিং মেশিনটি মেরামতের জন্য একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পত্র দিয়েছি। আশা করি খুব শিগগির এটি মেরামত করা সম্ভব হবে।