ভোলার ২২ লক্ষ মানুষের জন্য মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের দাবীতে মানববন্ধণ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে

ভোলার ২২ লক্ষ মানুষের জন্য মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের দাবীতে মানববন্ধণ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের সংগঠন ‘জার্নালিস্ট ফোরাম’ ভোলা এর আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব হারুন অর রশিদ ট্রুুম্যান, জেলা বিজেপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির সোপান, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ভোলা জেলার সভাপতি মোবাশ্বিরুলাহ চৌধুরী, জেলা বিএনপির নেতা ও ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইয়ারুল আলম লিটন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের সেলিম, জেলা জিয়া পরিষদের সদস্য সচিব আকবর হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মুনতাসীর আলম রবিন চৌধুরী, সাবেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবার আকন, বাংলাদেশ জমিয়াতুন মোদারেছীনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব মোবাশ্বিরুল হক নাইম, জেলা ইসলামী আন্দোলনের সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম তারেক, সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা কামাল হোসেন, কাচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ ইউসুফ, সিনিয়র সাংবাদিক মোকাম্মেল হক মিলন, দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি ওমর ফারুক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পিপি এ্যাডভোকেট সাহাদাত হোসেন শাহিন, বাসস এর ভোলা প্রতিনিধি আল আমিন শাহরিয়ার, দৈনিক আমার দেশ এর জেলা প্রতিনিধি ইউনুস শরীফ, দৈনিক মানবজমিনের ভোলা প্রতিনিধি ও ভোলা নিউজের সম্পাদক এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, নাজিউর রহমান কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেন শাহীন, জিটিভি ও যুগান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি এম হেলাল উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান রনি, মনির হোসেন, ভোলা ছাত্রসমাজের সাবেক সদস্য সচিব কামাল সর্দার, ভোলা কলেজের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত, মীর তানু, বিজেপি নেতা মাহিদুর রহমান শুভ, যুবদল নেতা রিয়াদ হাওলাদার, অভয় চৌধুরী, সামিম আল মামুন, সদর উপজেলা ছাত্রসমাজের সভাপতি মোঃ পারভেজ, বিজেপির নেতা মোঃ নোমান হাওলাদার, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাকারিয়া মঞ্জু, জার্নালিস্ট ফোরাম, ভোলার এর সহ-সভাপতি কাজী মহিবুল্লাহ আজাদ প্রমুখ। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে। 
মানবববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, জার্নালিস্ট ফোরাম, ভোলা এর সভাপতি শাহীন কাদের। মানববন্ধনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমরান হোসেন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি এম শাহরিয়ার ঝিলন। মানববন্ধনে সঞ্চালনা করেন, জার্নালিস্ট ফোরাম, ভোলা এর সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়ামিন হোসেন।
মানববন্ধন শেষে জার্নালিস্ট ফোরাম, ভোলার নেতৃবৃন্দ বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ রায়হান কাওসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান, জেলা পুলিশ শরীফুল ইসলাম এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এসময় বক্তারা বলেন, দেশের মূল ভূ-খ- থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা ভোলার ২২ লক্ষ মানুষ আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে একেবারেই বঞ্চিত। আমাদের জেলা সদর ভোলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ হিসেবে রূপান্তরের কথা থাকলেও বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের চিহ্নিত এক দোসরের ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্য হাসিলের কারণে সেটি করতে দেয়া হয়নি। তাছাড়া এখানে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনবল সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। এখানে নানাবিধ সমস্যার ফলে চিকিৎসাসেবা একেবারেই শূন্যের কোঠায়। এখানে চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে।
বক্তারা আরও বলেন, ভোলা সদরের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ২০১৯ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেই ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। বিগত ৭ বছরেও হাসপাতালটির শূন্য পদে চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেয়ায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত এ জেলার ২২ লাখ মানুষ।
জেলার লাখো মানুষ সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। অথচ সেখানে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শূন্য রয়েছে ৩৭টি পদ। এর মধ্যে একটি তত্ত্বাবধায়ক, সাতটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট, দুটি আরএস/আরপি/আরএমও, চারটি অ্যানেসথেটিস্ট, একটি রেডিওলজিস্ট, একটি মেডিকেল অফিসার, দুটি ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, দুটি সহকারী সার্জন/সমমান, সাতটি রেজিস্ট্রার/সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ৩৭টি পদ শূন্য রয়েছে। এখানে সৃজনকৃত ৬০টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৩ জন চিকিৎসক। গুরুত্বপূর্ণ ৩৪টি পদই শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের দুটি, বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের একটি, ভোলা সদর উপজেলার ১৪টি, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২১টি, দৌলতখান উপজেলায় ২৫টি, খায়ের হাটে সাতটি, লালমোহন উপজেলায় ২২টি, চরফ্যাশন উপজেলায় ২০টি, তজুমদ্দিন উপজেলায় সাতটি, মনপুরা উপজেলায় ১২টি, দক্ষিণ চর আইচায় চারটিসহ মোট ১৩৫টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
১০০ শয্যার পুরোনো ভবনে প্রতিদিন গড়ে ৩৬০ জন করে রোগী ইনডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু। শিশু ইউনিটে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় বিপুলসংখ্যক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বারান্দার মেঝেতে। একেক বেডে রাখা হচ্ছে ৪-৫ জন শিশু। চিকিৎসক-নার্সরা এত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বজনরা। অস্বাস্থ্যকর মেঝে ও এক বেডে একাধিক শিশুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে সংক্রমিত হচ্ছে নতুন নতুন রোগে। এতে বাড়তি বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল সংকট দূর করে ভোলার এই হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ হিসেবে রূপান্তরিত করে জেলার মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা সেবার সু-ব্যবস্থা করা হোক।