ভোলার মনপুরায় চরপাতালিয়া বনে হরিণ শিকারের ফাঁদ পেতে অভিনব কৌশলে মহিষ চুরির অভিযোগ উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের বিরুদ্ধে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বনের ভেতর ফাঁদ পেতে রেখে মহিষ শিকার করে আসলেও সম্প্রতি তাদের দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছেছে। সর্বশেষ আজ (মঙ্গলবার) সকালে ফাঁদে আটকানো মহিষ নিতে এসে লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ধরা পড়ার ভয়ে কয়েকটি মহিষের কান কেটে দিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা।

এই ঘটনায় মনপুরার সাধারণ মহিষ মালিকদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, বন বিভাগের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই চোরচক্র এমন দুঃসাহস দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে।

ভুক্তভোগী একজন মহিষের মালিক জানান, "প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও আমি আমার মহিষের পাল চরানোর জন্য বনে পাঠাই। কিছুক্ষণ পর খবর পাই, আমার কয়েকটি মহিষ চরপাতালিয়া বনের ভেতর পাতা ফাঁদে আটকা পড়েছে। আমি এবং এলাকার লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই।" তিনি আরও বলেন, "আমরা গিয়ে দেখি, মহিষগুলোকে শক্ত দড়ি দিয়ে এমনভাবে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে যেন সেখান থেকে সহজেই নৌকায় তুলে নিয়ে যাওয়া যায়। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরেরা পালিয়ে যায়, কিন্তু যাওয়ার আগে তারা আমার দুটি মহিষের কান ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দিয়ে যায়।"

এলাকাবাসী ও অন্যান্য ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, এই চোরচক্রটি মূলত হরিণ শিকারের জন্য পরিচিত হলেও এখন তারা বড় আকারের মহিষ শিকারকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা বনের গহীনে, বিশেষ করে নদীর কাছাকাছি স্থানে ফাঁদ পাতে, যাতে শিকার করা মহিষ দ্রুত নৌকায় তুলে অন্যত্র পাচার করতে পারে। গত কয়েক মাসে মনপুরার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকজন মালিক তাদের মহিষ হারিয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রই এর সাথে জড়িত।

স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "বন বিভাগের পক্ষ থেকে যদি নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে চোরেরা বনের ভেতর এমন অবাধে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাতে পারত না। টহলের অভাবেই বন এখন চোরদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।"

এই পরিস্থিতিতে মনপুরার অসহায় মহিষ মালিকেরা তাদের শেষ সম্বলটুকু হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তারা জানান, একটি মহিষ পালতে অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। এভাবে একের পর এক মহিষ হারিয়ে গেলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।

মনপুরার মহিষ মালিক সমিতি ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এই সংঘবদ্ধ চোরচক্রকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য মনপুরা উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং বন বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের আকুল আবেদন, অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই অঞ্চলের পশুপালন অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বহু পরিবার পথে বসবে।