জ্যৈষ্ঠ শেষে আষাঢ়ে জাতীয় ফল কাঁঠালের বাজার জমে উঠেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থান হাটে।
সারা দেশে কাঁঠাল অনেক অঞ্চল থেকে সরবরাহ হলেও মহাস্থানহাট তাদের মধ্যে অন্যতম। এ হাটে বগুড়া ছাড়াও জয়পুহাট, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল আমদানি করেন। তবে এবার কাঁঠালের আমদানি বেশি হওয়ায় অনেকটা স্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।
আগে মহাস্থানের আমদানিকৃত কাঁঠাল প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ ট্রাক দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হতো। সে হিসেবে এবার কাঁঠালের আমদানি কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তারপরেও আশানুরূপ ভাবে প্রতিদিনই মহাস্থান হাটে কাঁঠালের আমদানি হচ্ছে।
বুধবার বিকালে সরেজমিনে ঐ হাটে গিয়ে দেখা যায়, পাইকাররা ভিড় জমিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হাটে কাঁঠাল কেনাবেচা জন্য।
শিবগঞ্জ উপজেলা ও পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে কাঠাল কিনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভ্যানে করে নিয়ে আসে এ হাটে। তাদের নিকট থেকে আড়ৎদাররা কিনে কমিশনে সারা দেশে কাঠাল সরবরাহ করে থাকে। এবার প্রতিদিন ৮/১০ ট্রাক কাঁঠাল যাচ্ছে সারা দেশে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার উজগ্রাম থেকে এনামুল হক ৩২ টি কাঁঠাল নিয়ে অটোভ্যান যোগে মহাস্থান হাটে বিক্রি করতে এসেন। তার ৩২টি কাঁঠালের দাম হাকানো হয়েছে ২৫৬০ টাকা।
শিবগঞ্জ উপজেলার অনন্তবালা গ্রামের ব্যবসায়ী মমিন মিয়া বলেন, মহাস্থান হাটে কাঁঠালের ব্যবসা হয় তিন মাস।
ভ্যানবোঝাই করে মহাস্থান হাটে কাঁঠাল নিয়ে আসা পীরগাছার ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, প্রতিটি কাঠাল ৪০-৫০ টাকা কিনে ৭০ টাকায় বিক্রি করি। কাঁঠালের আকার বড় হলে দামের কিছুটা হেরফের হয়। প্রতিদিন আমরা গ্রাম-গঞ্জ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে মহাস্থান হাটে বিক্রি করে থাকি।
ব্যবসায়ীরা জানান, মহাস্থান হাটের কাঁঠাল যাচ্ছে কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম, লাকসাম, নোয়াখালী ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সিলেট থেকে আসা পাইকাররা জানান, এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। তাই মৌসুম জুড়ে অনেক কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে সিলেট থেকে এসে মহাস্থানের বিভিন্ন আড়ৎ থেকে ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাই।
মহাস্থানের ভাই ভাই আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী আব্দুস সবুজ মিয়া বলেন, আমরা প্রতি কাঁঠালে ৩টাকা করে কমিশন পাই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারীরা মহাস্থানহাটে কাঁঠাল কিনতে আসে। তারা আমাদের মাধ্যমে কমিশনে কাঁঠাল কিনে ট্রাক লোড দিয়ে তাদের মোকামে নিয়ে যায়। মহাস্থান হাট থেকে তারা কাঁঠাল কিনে তাদের এলাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। তিনি আরও জানান মহাস্থান কাঁঠালের বাজারের কারনে আড়ৎ ব্যবসায়ী, লেবার শ্রমিক, অটোভ্যান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, বগুড়ার শস্য ভান্ডার শিবগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় কাঁঠালসহ সকল মৌসুমি ফলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার থেকে পাইকাররা এ হাটে কাঁঠাল বিক্রি করে থাকে।