মাদারীপুর সদর উপজেলার চরনাচনা ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক ও বর্তমান কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুলের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই পৌঁছাবে কিনা? অধিকাংশ মাদরাসার শিক্ষকগণ তাদের মাদ্রাসার যেসব পুরানো বই আছে সেগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। অথচ ব্যতিক্রম ঐতিহ্যবাহী চরনাচনা ফাজিল মাদরাসায়ের আরবি প্রভাষক ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুল। তিনি বই সংরক্ষণ না করে মাদরাসার গোডাউনে রাখা লক্ষাধিক টাকার সরকারি বই চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষমতা দিয়ে মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর জানুয়ারীতে মাদরাসা ছুটির কিছুক্ষণ পরে আরবি প্রভাষক পুনরায় মাদরাসায় ফিরে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক এবং কর্মচারী ছিল।
তারপরে বই ক্রেতা জলিল ফকিরকে ডেকে ৫ লাখ টাকার সরকারি বই বিনামূল্যের কেজি দরে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।এদিকে উনি চেয়ারম্যান হওয়া সত্বেও অন্যান্য শিক্ষকরাও তার ভয়ে মুখ খুলছে না। এমন কি ওই মাদ্রাসার সুপারও ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না। মাদ্রাসা জনৈক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই গোডাউনে ২০২২ সালের সংরক্ষিত বই আরবি প্রভাষক ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুল বিক্রি করে দেন।কিন্তু সে চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাকে কিছু বলতে পারিনি। আমরা দূরের থেকে আসি চাকরি করতে। তিনি আরও বলেন, এবছরের নতুন বই বিক্রি করার জন্য ক্রেতা জলিল ফকিরকে ডেকে এনে ছিলো কিন্তু যখন সাংবাদিক তাকে সরকারি বই বিক্রি করা যাবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তখন তিনি ক্রেতা জলিল ফকিরকে ফিরিয়ে দেন। এ ছাড়াও আরবি প্রভাষক ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রতিনিয়ত ক্লাস করে না। এ বিষয়ে বই ক্রেতা জলিল ফকির বলেন,গত বছর আমাকে ডেকে নিয়ে আমার কাছে ৩৫ হাজার টাকার বই বিক্রি করেছে ওই মাদরাসার আরবি প্রভাষক ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুলসহ কয়েকজন শিক্ষক। ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুল তিনি বর্তমানে কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আমাকে এই বিষয়টা কাওকে বলতে না বলেছিল।
তিনি আরো বলেন, এ বছর তাকে বই দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়েছে মাদরাসায়।আমি একটি পিকআপ এবং কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে মাদরাসায় গিয়ে বইগুলো ওজন করে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছি।হঠাৎ বলে কয়েকদিন পরে বই দিবো।তারপরে দিবো দিবো বলে আর বই দেয়নি।আমি একটি পিকআপ এবং কয়েজন শ্রমিক নিয়ে বইগুলো বেধেছি এতে আমার অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে। তবে বই বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফাইকুজ্জামান ফকির বাবুল। তিনি বলেন, বই বিক্রির বিষয় সে কিছু জানেন না তিনি। আরো বলেন, যে সরকারি বই কখনো বিক্রি করা যায় না। কারা বিক্রি করেছে এ বিষয়ে আমি জানিনা। আপনাদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ কারা করেছে তাদেরকি কোন কাজ নেই। এদিকে নিয়মিত ক্লাস করেন না এ বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন,আমি নিয়মিত ক্লাস নিয়ে থাকেন। এদিকে ফাইকুজ্জামান বাবুলের ক্লাস না নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কে, এম মাহমুদুল হাসান।
তিনি বলেন, ফাইকুজ্জামান বাবুল স্যার নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার বিষয়টি সত্য।কয়েকদিন আগে ক্লাসের রুটিন সে চেঞ্জ করেছে কিন্তু আমার কোন পারমিশন নেয়নি। বরঞ্চ আমাকে জানানি। তিনি তার মন গড়া একটি রুটিন করেছে সে একজন আরবি প্রভাষক আর আমি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। সে চেয়ারম্যান তাই। এদিকে আরবি প্রভাষক বই বিক্রি করেছেন এ কথার সত্যতা স্বীকার করেন প্রিন্সিপাল। তবে এর বাইরে আমি বেশি কিছু বলতে পারব না। তাছাড়া আমি দূর থেকে আসি কারো বিরুদ্ধে বলে ঝামেলায় জড়াতে চাই না। জেলা শিক্ষা অফিসার জনাব হাবিবুল্লাহ বাহার জানান,বই বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। যদি সে করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন,একটি মাদরাসা আরবি প্রভাষক এভাবে বই বিক্রি করতে পারেন না। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।