তারা বলেন, এতে সরকারি রাজস্ব আয় যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনি দুরদুরান্ত থেকে আসা ভ্রমন পিপাসু মানুষ আরও বেশি উৎসাহিত হতো। দেশে যতগুলো প্রাচীন কীর্তি নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অন্যতম। প্রায় ২শ বছরের জমিদার বাড়িটি কালের কীর্তিমান সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছোঁয়ায় জমিদার বাড়িটি যেন প্রান ফিরে পেয়ে, দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।পর্যটকরা এখানে ঢুকতেই বিস্ময়ভরা চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেন বাড়ির ভবন নির্মান কৌশল। অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রসংসা করেন ওই আমলের অ-কল্পনীয় কারুকাজের নির্মান শিল্পীদের।

কয়েক বছর আগেও জ্বীন-পরী ভূতের আস্তানা ভাবতো যে জমিদার বাড়িটি, ভেতরে ঢুকলে গা শিহরীত হতো ঝিঝি পোকার ডাকে। অজানা আতঙ্কে বুকও কাপতো শিশু বাচ্চাসহ নবীন ও প্রবীনদের । প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছোয়ায় স্বপ্নীল সৌন্দর্যে রঙ্গিন সেই জমিদার বাড়ি এখন দিেশ-বিদেশি দর্শনার্থী পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত।

রং চুনকাম করার পর এখন ভবনগুলো যেন প্রান ফিরে পেয়ে রৌদ্রজ্জল হাসি দেখা দিয়েছে। বাডির সামনে গেলেই মনে হয় যেন দীর্ঘদিন পর জমিদার রায় বাহাদুর ফিরে এসছে। দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটক এসব ভবনে ঢুকেই কারুকাজ দেখে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন। ভূয়সী প্রশংসা করেন সে আমলের নির্মান কারিগরদের। জমিদার বাহাদুরের ভয়ে যে বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে আর ছাতা মাথায় নিয়ে যেতে পারতো না এ এলাকার কোনো মানুষ। সেই বাড়িটি এখন প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত। কর্মস্থলে ফেরার আগে শুক্রবারেও উপভোগ করছেন জমিদার বাড়ির নৈস্বর্গীক দৃশ্য। টিকিট নিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে দর্শনার্থীর ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে শিশু ও নারীদের সংখা বেশি। সাটুরিয়ায় ২শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহি জমিদার বাড়ি নতুন সাজে সজ্জিত। সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা শহুরে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যা দেখলেই বোঝা যায় সাটুরিয়ায় ঈদের আমেজ এখনো কাটেনি।পুরান ঢাকার দর্শনার্থী কবীর হোসেন ও আনোয়ার ভুইয়া জানান, প্যালেসে বেড়াতে এসে ঈদের আমেজ পুরোভাবে উপভোগ করা হলো। পরিবারের শিশুরাও খুবই আনন্দ পেয়েছে। তবে বিশাল এই অব্যবহৃত ভবনের একাংশে সরকারি ভাবে খাবার ক্যানটিন কিম্বা রেষ্ট হাউজ করা হলে আরও ভাল হতো বলে মন্তব্য করেন।

তারা বলেন, এতে সরকারি রাজস্ব আয় যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনি দুরদুরান্ত থেকে আসা ভ্রমন পিপাসু মানুষ আরও বেশি উৎসাহিত হতো। দেশে যতগুলো প্রাচীন কীর্তি নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অন্যতম। প্রায় ২শ বছরের জমিদার বাড়িটি কালের কীর্তিমান সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছোঁয়ায় জমিদার বাড়িটি যেন প্রান ফিরে পেয়ে, দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।পর্যটকরা এখানে ঢুকতেই বিস্ময়ভরা চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেন বাড়ির ভবন নির্মান কৌশল। অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রসংসা করেন ওই আমলের অ-কল্পনীয় কারুকাজের নির্মান শিল্পীদের।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এখানকার জমিদারগন দশআনা ও ছয় আনা অংশে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ১৯৫৭ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগেই বালিয়াটি জমিদারগন এ বিশাল প্রাসাদ ছেরে ভারতে পাড়ি জমায়। ১৯৮৭ সালে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বাড়িটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষনা করে এর দায়িত্ব গ্রহন করে। বর্তমানে দশআনা অংশের জমিদার বাড়ি নিয়ন্ত্রন করে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে তার সংস্কার কাজ করছে।

বাড়ির সামনের কাতারে রয়েছে বৃহদাকার চারটি অট্টালিকা। প্রত্যেক অট্টালিকায় ঢোকার জন্যে রয়েছে সিংহ মূর্তী খচিত ভিন্ন চারটি প্রবেশদ্বার।সম্প্রতি রং করা ওই প্রবেশ দ্বারের সিংহ দেখে জীবন্ত মনে করে আগত শিশুরা আতঁকে উঠে। চারিদিকে প্রাচীর ঘেড়া প্রায় ৬একর বাড়িটির ভেতরের অংশে রয়েছে আরো তিনটি ভবন। প্রত্যেক ভবনের বিশাল ব্যয়ে নির্মিত শাল আর সেগুন কাঠের তৈরী সিড়িগুলো পর্য টকদের নজর কাড়ে। পেছনে রয়েছে ছয় ঘাটলা বিশিষ্ট দর্শনীয় বিশাল পুকুর।দেশের খ্যাতিমান পরিচালকদের চলচ্চিত্র, নাটক, টেলিফিল্ম, প্রামান্য চিত্র নির্মানের শুটিং করতে প্রায়ই দেখা যায় এ বাড়ীতে। বাদ যায়নি জনপ্রিয় নির্মাতা হানিফ সংকেত এর ইত্যাদির শুটিং পর্ব। ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে পরিচালক হানিফ সংকেত”ইত্যাদি”র সম্পূর্ণ শুটিং এ প্রাসাদের সামনে করেন । তার শুটিংয়ের আলোক সজ্জায় প্রান ফিরে পেয়েছিল নিঃসঙ্গ প্রাসাদটি। যেন জমিদার বাহাদুর আবার প্রাসাদে ফিরে এসেছে । কালজয়ী ছবি বেহুলা লক্ষিন্দর, দোস্ত দুশমন, জীবন সীমান্তে-সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে এ বাড়ীতে।শুটিং করতে ঢাকার আগারগাঁও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অফিসে অনুমতি নেন পরিচালকরা । এতে সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় হয়।

কথা হয় স্থানীয় ৮০ বছরের বৃদ্ধ মমিন মিয়ার সাথে, মর্নিং পোষ্টকে জানান ওই জমিদারদের আচরনের কথা। তাদের আমলে জুতা পায়ে আর ছাতা মাথায় নিয়ে যে কেউ এ বাড়ীর সামনে দিয়ে যেতে পারতো না। এতে নাকী বাবুদের অসম্মান করা হতো। এ নিয়ম অমান্য করলে তাকে প্রচন্ড শাস্তি পেতে হতো। জমিদারগনের নারীলোভ আর অত্যাচারের মাত্রা ছিল ইতিহাসের নীলকর ইংরেজদের চেয়েও ভয়ঙ্কর।বালিয়াটি ইউপি চেয়ারম্যান মীর সোহেল চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহার লম্বা ছুটি কাটাতে চাকুরিজীবি পরিবার শিশু বাচ্চাদের নিয়ে ভীড় করছেন। যেন ঈদের আমেজে ভাসছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া বালিয়াটি প্রাসাদ। দেশিবিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধা করতে বর্তমান এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া থেকে বালিয়াটি প্যালেস পর্যন্ত ৭টি ব্রিজসহ ব্যয়বহুল রাস্তা নির্মান করে দিয়েছেন।প্রাচীন নিদর্শন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জের গর্ব আখ্যায়িত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান মর্নিং পোষ্টকে জানান, প্রাসাদ ভবনের দরজা, জানালা, অনেকটা মেরামত ও রংয়ের কাজ করে দর্শনার্থীর আকৃষ্ট মূলক সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীরা ভীড় করছে। এতে সরকারের বেশ রাজস্ব আয় হচ্ছে।