পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে প্রকৌশলীর সামনেই ঠিকাদারকে মারধর করে টাকা লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের গাউয়া খালের উপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলছিল। এ কাজের সাব ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু ও তাঁর সহকর্মীকে মারধর করে স্থানীয় ও অজ্ঞাত কয়েকজন। এর ভিত্তিতে রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে আহতের পিতা এ্যাড. মিজানুর রহমান মির্জাগঞ্জ সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আহতরা পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের জয়নাল গাজীর ছেলে জুয়েল গাজী, তাঁর ছোট ভাই সজল গাজীসহ অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জন। এর আগেও জুয়েল গাজীর বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ শাখার ব্রাক কর্মীকে যৌন হয়রানির মামলা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মতে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস খায়রুল কবির রানা এন্টারপ্রাইজ টেন্ডারের মাধ্যমে বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায়। ওই কাজ মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু চুক্তিতে ক্রয় করে। এলজিইডির আওতাধীন এই কাজের প্রাক্কালে জুয়েল গাজী ও তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। গত রবিবার (১২ জানুয়ারি) বক্স কালর্ভাটের বেড ঢালাইয়ের কাজ চলাকালীন সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। তাঁর সামনেই জুয়েল গাজী ও তাঁর ভাই সজল গাজীর নেতৃত্বে ৭/৮ জন লোক এসে কাজে বাঁধা দেয় এবং তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা দেওয়ার জন্য বলেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর সহকর্মী মিরাজকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুর কাছে থাকা শ্রমিকদের বেতন, মালামাল ক্রয়ের জন্য ১০০০০০ /- এক লাখ টাকা ও তাঁর সহকর্মী মিরাজের কাছে থাকা ৪০৫০০/- চল্লিশ হাজার পাঁচশত টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে মোস্তাফিজুর রহমান ও মিরাজকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় জুয়েল গাজী ও তাঁর সহযোগীরা আমার কাছে চাঁদা চেয়েছেন। চাঁদা না পেয়ে তাঁরা আমার ও আমার সহকর্মীকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেন। তাদের বাঁধার কারণে সরকারি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে জুয়েল গাজীর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি প্রথমে মারামারির কথা অস্বীকার করেন এবং কথার বলার এক পর্যায়ে বলেন ঠিকাদাররা আমাদের মারধর করছেন বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, জুয়েল গাজী ও তার ভাই সজল সাইডের মিক্সার মেশিন বন্ধ করলে ঠিকাদার ও জুয়েলের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। আমি ও আমার অফিসের দুই সহকর্মী এসে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেই এবং দুই পক্ষ চলে যায়। কিছু সময় পর জুয়েল ১০/১৫ জন লোক নিয়ে এসে ঠিকাদার ও তার সহকর্মীকে মারধর করে। উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ৩নং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের গাউয়া খালের উপর বক্স কালর্ভাট নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে মারধরের কথা শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে জানানো হবে। এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামিম হাওলাদার বলেন, আজ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে ঠিকাদারকে মারধরের কথা শুনেছি, লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধী কেউ পার পাবে না।