যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা সে অনুষ্ঠানের ব্যানারে নয়টি ভুল, অতপর ব্যানার ছাড়াই অনুষ্ঠান সম্পন্ন

পবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে 'গবেষণা উৎসব - ২০২৫'। ১৮ মে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম গবেষণা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় বানান ভুলের মহোৎসব। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। 'পবিপ্রবির রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার' এর উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে বানান ভুল যেন পন্ড করে দিল উৎসবমুখর পরিবেশ। একটি ব্যানারে ৯ টি বানান ভুল। অতপর ব্যানার ছাড়াই করতে হয়েছে অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় কাজের ব্যস্ততার কারণে স্ব শরীরে  উপস্থিত হতে পারেন নি। কিন্তু অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো: সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার এর উপস্থানায় প্রধাণ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর  ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মাসুমা হাবিব, পবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস.এম. হেমায়েত জাহান এবং সিনিয়র প্রফেসর মো: হদমিদুর রহমান।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় টানানো হয় ব্যানার। এরপর একে একে সবার চোখে ধরা পরতে থাকে একের পর এক ভুল। এক ব্যানারে পাওয়া যায় ৯ টি ভুল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার ডেজিগনেশন ও মন্ত্রানালয়ের নামের বানানটিতে করা হয় ভুল। Livestock এর পরিবর্তে Live  এবং stock আলাদা দুইটি শব্দ লেখা হয় ব্যানারে। অনুষ্ঠানের থিম ছিল "Research for Coastal Resilience". এখানে Coastal বানানটির পরিবর্তে 'Costal' লেখা হয়েছে। অনুষ্ঠানের আয়োজক 'Research and Training Center (RTC), PSTU' এটা লিখতে গিয়ে করা হয় দুইটি বানান ভুল। Organized এর পরিবর্তে ভুল করে লেখা হয়েছে 'Orgnaize' এবং Training এর পরিবর্তে লেখা হয়েছে 'Traning'. এছাড়া আরো ছোটো বড় ৪ টি ভুল করা হয়েছে ব্যানারটিতে। সবচেয়ে বড় ভুল চোখে পরে অনুষ্ঠানের সভাপতির ডেজিগনেশনে। পবিপ্রবির রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো: মামুন-উর-রশিদ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। কিন্তু তার ডেজিগনেশনে পরিচালক, রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পবিপ্রবি) এর পরিবর্তে লেখা হয়েছে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর,  পবিপ্রবি। এটা নিয়েই তোলপাড় শুরু হয়। রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালকের নাম ও পদবির এই ভুলকে কেউ কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ এবং চাকরি বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেও মনে করেন। প্রথমবার কেউ দেখলে হয়ত ভাবতে পারে পবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর বোধ হয় পরিবর্তন করা হয়েছে। এরকম গুরুতর ভুলের কারনে পরে ব্যানার খুলে ফেলে ব্যানার ছাড়াই শুরু করা হয় অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে যারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাইকে উপহার হিসেবে একটি করে ব্যাগ দেয়া হয়েছে। সেই ব্যাগের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের নিচে পটুয়াখালী জেলার নামেও করা হয় ভুল।

এত এত বানান ভুলের কারনে ব্যানার ছাড়াই অনুষ্ঠান করার বিষয়ে জানতে চাইলে  রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মামুন-উর-রশিদ আমার দেশকে বলেন, "ব্যানার গতকাল রাতে ১১ টায়  তৈরি করা হয়েছিল, এরপরে ব্যানারটি খুলে চেক করে দেখা হয় নি। যখন আমরা অনুষ্ঠান শুরু করতে যাই তখন ভুল গুলো আমাদের চোখে ধরা পরে এবং সাথে সাথেই আমরা ব্যানার সরিয়ে নেই। পরে ব্যানার ছাড়াই প্রোগ্রামটা করি।"

এত এত ভুলের পরে ব্যানার ছাড়াই এতবড় একটি অনুষ্ঠান করাটা বিশ্ববিদ্যালয় ও আয়োজকদের জন্য লজ্জাজনক কিনা জানতে চাইলে ড. মো: মামুন-উর-রশিদ বলেন, "ব্যানার ছাড়া প্রোগ্রাম করাটা যদি লজ্জাজনক হয় তবে এর পুরো দায় অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমার উপরই বর্তায়।  আমি চেষ্টা করিছি,  হয়ত আমার ইগনোরেন্সের কারনেই এরকমটা ঘটেছে।"

এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায় নি।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ভিডিও বার্তায় প্রধাণ অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী  বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাফরিদা আখতার বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানচর্চা ও সৃজনশীলতার কেন্দ্র। শিক্ষক ও গবেষকদের উচিত নিয়মিত নিজেদের যুক্ত রাখা এবং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।"