পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায় ক্ষিপ্ত হয়ে জবাই করে ফেলার হুমকি দিয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, খানখানাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মামলার আসামী সাইদুর রহমান মোস্তাক। তিনি তার ওয়ার্ডের কাজীপাড়ার বাসিন্দা চেনোরুদ্দিনকে বলেন “পুলিশ যদি আসে, তোরে আমি খাইছি” এভাবেই হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেছেন।

সম্প্রতি ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা সাইদুর রহমান মোস্তাকের হুমকি ও গালিগালাজের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সহ অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার দিয়েছেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় চেনোরুদ্দিনকে হিজড়া সহ বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন ইউপি সদস্য মোস্তাক। একপর্যায়ে তিনি ওই ব্যক্তিকে বলেন, ‘যদি এই দেশে পুলিশ আসে, তোরে আমি খাইছি। কয়ে গেলাম। তোরে খাব আমি।’

এ ইউপি সদস্য হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি মেম্বার আমি একজন বিচারক। আমি কইতেছি তোর (প্রকাশের অযোগ্য ভাষা) ঢুকতেছে না? আমি যে রায় দিছি, সেই রায় তোর (প্রকাশের অযোগ্য ভাষা) ঢুকতেছে না? তোর চেইন তোর মাইজ্যা মেয়ে চুরি করেছে। এটাই রায়। মেম্বার হিসেবে এইটাই আমার রায়। তুই বুঝস না?’

মোস্তাক হুমকি দিয়ে আরও বলেন, ‘ফাঁড়িতে যাওয়া (প্রকাশের অযোগ্য ভাষা)। এই তারিকি যদি আমারে ধইর‌্যা নিয়ে যায়। বাইর‌্যাবো না? এক মাস পরে, দুই মাস পরে বাইর‌্যাবো না? বাইর‌্যাবো না আমি? তোরে একেবারে জবাই করে থুইয়্যা তারপর আমি যাব।’

এ হুমকি দেওয়া ছাড়াও মোস্তাকের বিরুদ্ধে বিভিন্নজনকে মারধর সহ আরও নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর গ্রামের তারেক খানের ছেলে জিসান খান বাদী হয়ে গত ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারী পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বেশ কিছুদিন জেলে থাকার পর জামিনে বের হন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভিডিও প্রকাশকারী মোস্তফা আমির ফয়সাল বলেন, ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান মোস্তাক রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর আস্থা ভাজন হওয়ার সুবাদে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এ ইউপি সদস্য। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এলাকায় মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানো, মসজিদের গম ও নগদ টাকা আত্নসাৎ, জমি দখল, নারীদের মারধর সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হলেও জেল থেকে বের হয়ে আবারও শুরু করেছে নানা অপকর্ম। বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা সাইদুর রহমান মোস্তাক বলেন, ৩-৪ মাস আগের ভিডিও। ওই বাড়ীতে সোনা চুরি হয়। তার মেয়েই চুরি করে। কিন্তু এ নিয়ে ওই এলাকায় ও খানখানাপুর তদন্ত কেন্দ্রে শালিসে পাশের বাড়ীর একটি মেয়েকে অপবাদ দেয়। শালিসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নেয়। এ কারণে তাকে বলেছিলাম। এটা ভিডিও করে ছেড়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কাদের মোল্যা বলেন, এ ধরণের হুমকির বিষয়ে কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।