মার্কিন কূটনীতির ইতিহাসে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান রূপ তৈরিতেও কিসিঞ্জারের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর শতবর্ষ উদযাপন করছেন। ২৭ মে তাঁর বয়স হয়েছে ১০০ বছর। জন্মদিন উপলক্ষে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ছিল ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করা। তাঁর মতে, এই কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গেছে।কিসিঞ্জারই মার্কিন ইতিহাসের একমাত্র কর্মকর্তা যিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা – এই দুটি দায়িত্বই পালন করেছেন। মার্কিন কূটনীতির ইতিহাসে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান রূপ তৈরিতেও কিসিঞ্জারের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, হেনরি কিসিঞ্জারের আমলেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে কিসিঞ্জারের নেতৃত্বেই ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি। মূলত ওই সময়ই দুই অক্ষে ভাগ হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিল কিসিঞ্জারের আমেরিকা, আর অন্য পক্ষে ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, ইউক্রেন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার একটি প্রভাব রয়েছে। সেই প্রভাব থাকার বিষয়টি জানা থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি ঠিক ছিল না। এটি একটি মারাত্মক ভুল এবং সে কারণেই যুদ্ধ বেঁধেছে।

অবশ্য এর পরেও জো বাইডেন প্রশাসনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন শতবর্ষী হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি বলেছেন, ‘বাইডেন প্রশাসন অনেক কিছুই সঠিকভাবে করেছে। আমি ইউক্রেনে তাদের সমর্থন করি।’ একইসঙ্গে রাশিয়া থেকে আরও নানা ধরনের বিপদ সৃষ্টির আশঙ্কাও জানান তিনি। এক জার্মান-ইহুদি পরিবারে হেনরি কিসিঞ্জারের জন্ম। বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে আমেরিকায় এসেছিলেন তিনি। এরপর এক পর্যায়ে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন কিসিঞ্জার। তবে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় নায়ক সম্মানে ভূষিত হলেও বাকি বিশ্বে কিসিঞ্জারের নীতির বেশ সমালোচনাও হয়ে থাকে। বিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেশে ক্যু সংগঠনের দায়ও কিসিঞ্জারকে দেওয়া হয়ে থাকে।