মুসলিম উম্মাহর জন্য শিরক একটি ভয়াবহ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধের নাম। পৃথিবীতে মানুষ নাফস বা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যত ধরনের অপরাধ করে যেমন মদ্যপান, ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ,জিনা- ব্যাভিচার , অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা ইত্যাদি যত ধরনের অনাচার করে থাকে তার মধ্যে শিরক হলো সবচেয়ে জঘন্যতম ও নিকৃষ্টতম অপরাধ। রাসুল (সা:) এর প্রিয় সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, " আমি রাসূল (সা:) কে প্রশ্ন করেছিলাম কোন গুনাহ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় ? তিনি বললেন, তুমি যখন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে ,অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। " (সহীহুল বুখারী , হাদিস নং ৪৭৬১)

ধরুন , আপনি কোনো একজনের অধীনে  কাজ করেন।তিনি  আপনাকে মাস বা দিন শেষে টাকা দেন।আপনি যদি তার বিরুদ্ধে শত্রুতা করেন এবং তিনি  যদি তা জানতে পারেন, তিনি  অবশ্যই আপনাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করবেন। একবার আপনি চিন্তা করে দেখুনতো  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে বিনা টাকায়, কোনো রকম বিনিময় ছাড়া কোটি কোটি টাকার অক্সিজেন দিচ্ছে যা ছাড়া মানুষের এক মুহুর্ত ও বেঁচে থাকা সম্ভব নয় ,  আপনাকে সুস্থ রেখেছেন, আপনার রিজিকের ব্যবস্থা করছেন, সেই আল্লাহর সাথে  যদি আপনি অংশীদার সাব্যস্ত করেন, অবশ্যই ঐ মালিকের মতো এই আরশের মালিক ও আপনার উপর রাগান্বিত হবেন।  প্রিয় পাঠক,  একবার আমরা কুরআন এবং হাদিস থেকে শিরকের ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। পবিত্র কুরআনে এসেছে, " নিশ্চয়  আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না,যে লোক   তার সাথে শরীক করে। " (সুরা নিসা ৪৮)

আপনার আমলনামায় যদি যিনার গুনাহ থাকে,হত্যার গুনাহ থাকে, চুরির অপরাধ থাকে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইচ্ছা করলে আপনাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তুু শিরকের গুনাহ তাওবা ছাড়া তিনি ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায় না। শিরকের মতো ভয়াবহ পাপ করে যদি তাওবা ছাড়া মারা যান,আপনাকে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে  এসেছে,  "নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে,আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাত হারাম করে দেন।  তার বাসস্হান হবে জাহান্নাম। " প্রিয় পাঠক,একবার ভেবে দেখুন, আপনি নিয়মিত সালাত আদায় করছেন,মসজিদ বানিয়ে দিচ্ছেন,যাকাত আদায় করছেন, এতিম কে খাবার খাওয়াচ্ছেন,এতো কিছু দান করার পর ও যদি শিরক করেন আপনার উপরোক্ত  আমলসহ পূর্ব জীবনের সকল আমল  বাতিল হয়ে যাবে। জান্নাতের মালিক ই যদি কারো জান্নাত হারাম করে দেন,তাহলে তার কী উপায় হবে? রাসুল (সা:) একদা মুয়াজ (রা:)কে বলেন, " আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না,যদি ও তোমাকে হত্যা করা হয়,কিংবা পুড়িয়ে মারা হয়।" 

একবার ভেবে দেখেছেন, রাসুল (সা:)কতো কঠোর উপদেশ দিয়েছেন!  পুড়িয়ে মেরে ফেললে কত কষ্ট, কত যন্ত্রনা! তারপর ও রাসুল (স:) বলেছেন পুড়িয়ে মেরে ফেললেও যেন কেউ শিরকের মতো ভয়াবহ অপরাধ   না করে। ভেবে দেখুন তাহলে শিরক কতটা ভয়াবহ পাপ। কতটা জঘন্য মহাপাপ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা  বলেন," যদি কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে,তাহলে তার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে। " (সুরা যুমার,আয়াত: ৬). প্রিয় পাঠক,একবার চিন্তা করে দেখছেন, কতটা কঠোর হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে! শিরক করলে সকল আমল ধংস হয়ে যাবে। একটা উদাহরণ খেয়াল করুন। ধরুন আপনার অনেক টাকা,আল্লাহর পথে অনেক ব্যায় করেছেন, জামাতে সালাত আদায় করেছেন সবসময়, আল্লাহর সব আদেশ পালন করেছেন যথাযথভাবে। কিন্তুু অজান্তেই সামান্য শিরক করেছেন। এই সামান্য শিরক করার কারণে আপনার সমস্ত ভালো কাজের সাওয়াব   বরবাদ হয়ে যাবে। আপনি পরকালে  তখন আফসোস করতে থাকবেন, বলবেন," আমার সেই আমলগুলো কোথায় গেলো!" আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, "তখন আফসোস করে আপনি বলতে থাকবেন,হায়! আমি যদি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম!' (সুরা কাহাফ,আয়াত: ৪২).

আল্লাহ  সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে ২৫ জন নবী রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে সুরা আন'আমের  ৮৩ থেকে ৮৬ নং আয়াতের মধ্যে  আঠারো জন   নবী (আলাইহিমুস সালাম) এর  নাম এসেছে। এই নবিদের ব্যাপারে আলোচনার পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া  তায়ালা বলেছেন, " যদি তাঁরা ও শিরক করতেন,তাহলে তাদের সমস্ত আমল ও ব্যর্থ হয়ে যেত! " আল্লাহ কুরআনে বলেন, " যদি তাঁরা কোনো শিরক করতো,তাহলে তাদের সমস্ত কৃতকর্ম ধ্বংস হয়ে যেত। " যদি শিরকের কারণে নবিদের আমল ও ধ্বংস হয়ে যায় ,তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের কি ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে সেটা কি এখন ও বুঝতে পারছেন না? আপনারা সবাই প্রাথমিক পর্যায়ের গুণ অঙ্ক জানেন।যদি একটা সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করেন,তাহলে গুনফল কত হবে? গুণফল হবে শূন্য। কাগজে আপনি যত বড় আকারের শূন্যই লেখেন না কেন শূন্যের কোন মূল্য নেই। ঠিক একইভাবে আপনি যত আমলই করেন না কেন শিরক করার কারণে আপনার  আমলের  কোন  দাম  নেই। শিরক করার অর্থ হলো,সবকিছু শূন্য দিয়ে গুণ করা!

শিরক প্রধানত দুই প্রকার।
১. শিরকে আকবর। 
২. শিরকে আসগর৷ 

এখন আমাদের মুসলিম সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ। 
১ . মাজারে  পীরের নামে  মানত করা।
২. জোতিষী বা গণকের কথা বিশ্বাস করা। 
রাসুল (সা:) বলেছেন , যদি কেউ গণকের কাছে যায়,এবং তাকে কিছু জিঙ্গাসা করে,তাহলে ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না। 
সহীহ মুসলিম ( ৫৯৭৫ ) .   
৩.আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে,তা বিশ্বাস করা। 
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা  বলেন, আল্লাহ ব্যাতীত  কেউ গায়েব জানে না। 
(সুরা আন'আম, আয়াত: ৫৯) 
৪. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত করা। 
রাসুল  (সা:)  বলেছেন, "যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে,সে শিরক করে।" 
(মুসনাদে আহমদ ,৬৩৪০).
৫. বিপদ থেকে বাঁচতে তাবিজ, সুতা , বালা, গলায় ঝুলানো। 
রাসুল (সা:) বলেছেন ,যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করলো। 
( মুসনাদে আহমদ) 
৬.কুলক্ষণে বিশ্বাস করা। 
রাসুল (সা:) বলেছেন, তিয়ারা তথা কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক,কথাটি তিনবার বলেছেন।