তিনি জানান, প্রথম ধাপে ৪৪টি জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ৫-১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২-১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে ১ ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমক্স ৫০০ মি.গ্রা.) ভরা পেটে খাওয়ানো হবে। প্রথম ধাপে ওষুধ সেবনকারী শিশুর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ। নাজমুল ইসলাম বলেন, কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদযাপন করার লক্ষ্য হচ্ছে স্কুলগামী, স্কুল বহির্ভূত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, পথ শিশু, কর্মজীবী শিশুসহ সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে সেবন করানো। একইসঙ্গে কৃমির পুনঃসংক্রমণ রোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।
এসব শিশুদেরকে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্যান্য পরজীবীবাহিত রোগব্যাধি থেকেও পরিত্রাণ পাবে। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য মতে, কৃমির সংক্রমণ বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। ০ থেকে ৪ বছর বয়সীদের ৭ শতাংশ, ৫-১৪ বছর ৩২ শতাংশ, ১৫-২৪ বছর ১৫ শতাংশ, ২৫-৪৪ বছর ৭ শতাংশ, ৪৫-৫৪ বছর ৫ শতাংশ এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪ শতাংশ। এই জরিপের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মধ্যে এই কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের দেশে কর্মসূচিটি ২০০৫ সালে প্রথম বারের মতো ৩ জেলায় নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে জুন ২০০৭ পর্যন্ত ১৬ জেলায়, মে ২০০৮ পর্যন্ত ২৪ জেলায় ও নভেম্বর ২০০৮ থেকে ৬৪টি জেলায় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমটি সম্প্রসারিত করা হয়। শুরুতে এই কর্মসূচিটি শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে সীমিত রেখে চালু করা হয়। পরে লক্ষ্য করা যায়, ৫ বছর বয়সী অনেক শিশুই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যায়, আর তাই ২০১০ সাল থেকে ওই কর্মসূচিতে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সরকারি, বেসরকারি, ফরমাল, নন-ফরমাল স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তব) এবং প্রায় ৩৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের (বিদ্যালয়, মাদ্রাসা) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত। শিশুদের মধ্যে ওষুধ সেবনের হার প্রত্যেক রাউন্ডেই ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ রয়েছে। এই কৃমিনাশক ওষুধের ফলে শিশুদের মল পরীক্ষায় কৃমির উপস্থিতি ৮০ শতাংশ (২০০৫) থেকে ৭.৯৫ শতাংশে (২০১৮-১৯) নেমে এসেছে। অধিদপ্তর জানায়, কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উল্লেখিত হার অব্যাহত থাকলে এবং দেশের সব শিশুকে পরিষ্কার-পরিছন্নতা বিষয়ে শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে প্রতিটি ঘরে আমরা কৃমি মুক্ত শিশু দেখতে পাব যা সুন্দর ও সুস্থ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।