আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেছেন টানা দুই মেয়াদে মেয়রের। মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে এই অধ্যায়। এ দিনই শুরু হবে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান অধ্যায়। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন আরিফুল হক চৌধুরী; দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নবনির্বাচিত মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

এ দিন সকালে কুমারপাড়ার ‘মেয়র হাউস’ থেকে কালোরঙা গাড়িতে চড়ে মেয়র হিসেবে শেষবারের মতো নগরভবনে যাবেন আরিফুল হক। পরেরদিন সকাল থেকে এই গাড়িতেই চড়বেন আনোয়ারুজ্জামান। সিলেটের ‘উন্নয়নের বর পুত্রখ্যাত’ প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের স্নেহধন্য আরিফুল হক চৌধুরী সাইফুরযুগেই কাউন্সিলর হয়ে নগরভবনে প্রবেশ করেছিলেন। কাউন্সিলর থাকাকালে নগর উন্নয়ন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নগরজুড়ে ছিল তার বিচরণ। তৎকালীন মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পাশ কাটিয়েও তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন বলেও শোনা যায়। এভাবেই উত্থান হওয়া আরিফুল হক চৌধুরীকে ২০১৩ সালে মেয়র পদে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়ন দেয় বিএনপি। পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে তিনি জিতেও যান।

তিনি যখন মেয়রের চেয়ারে বসেন তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বৈপরিত্যে থেকেও তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে ব্যক্তি আরিফেরও যেনো তৃপ্তির শেষ নেই। শেষবেলায় একাধিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার চোখেমুখে দেখা গেছে সফলতার ছায়া। তারপরও তিনি নিজেই বলেছেন- ‘অনেক কিছু করার ছিল, করতে পারিনি।’ আবেগাপ্লুতকণ্ঠে জানিয়েছেন, মেয়রপদে না থাকলেও নগরবাসীর সঙ্গ ছাড়বেন না তিনি। বিপদে-আপদে সর্বদা নগরবাসীর পাশে থাকবেন।

আরিফুল হক চৌধুরীর সময়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ এসেছে সিলেটে। স্বভাবতই নগরজুড়ে প্রচুর কাজ হয়েছে। বর্ধিত ওয়ার্ডগুলো বাদ দিলে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের অলিগলিতে সড়কউন্নয়ন কাজ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মোড়গুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক চত্বর। নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ওয়াকওয়ে। কাজ হয়েছে ফুটপাত-ড্রেনের। নতুন করে সাজানো হয়েছে হযরত মানিকপীর (রহ.) নাগরিক গোরস্তান ও ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানের চারপাশ। উদ্ধার করা হয়েছে নগরের কয়েকটি ছড়া-খাল। সেগুলোর দু’পাশে নির্মাণ করা হয়েছে গার্ডওয়াল। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ আরিফুল হক চৌধুরীর অন্যতম সফলতা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভোলানন্দ উত্তরন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, কিনব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে উন্নয়ন হয়েছে। নগরের ময়লা-আবর্জনা সঠিকভাবে ও নিরাপদে ফেলতে বানানো হয়েছে কয়েকটি সাব-স্টেশন। নগরীর সরু রাস্তা প্রশস্ত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। প্রশংসা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনেরও।

আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যর্থতার পাল্লাও খুব হালকা নয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও জলাবদ্ধতা সমস্যা রয়েই গেছে। তাই বিগত দিনগুলোতে জলাবদ্ধতায় ভুগতে হয়েছে নগরবাসীকে। উন্নয়ন কাজের দীর্ঘসূত্রিতায়ও মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কোনো উন্নয়ন কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। একবছরের কাজ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তিন বছরে। দিনের পর দিন নগরজুড়ে রাস্তাঘাট অলিগলিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে নির্মাণসামগ্রী। নগর কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে আম্বরখানায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে কবি ও শিক্ষক বাসিত মোহাম্মদকে। নির্মাণাধীন নগরভবনের উপর থেকে নির্মাণসামগ্রী মাথায় পড়ে মৃত্যু হয়েছে সেনাবাহিনীর এক সদস্যের। ঢাকঢোল পিটিয়ে নগরীর মাস্টারপ্ল্যান করার আশ্বাস দিলেও পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছেন আরিফুল হক। শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারেননি তিনি। নগরবাসীর যানবাহন সমস্যার সমাধানেও কোনো দেখা যায়নি। ব্যবস্থা করতে পারেননি নগরীর সব অধিবাসীর জন্য সুপেয় পানীয়জলের। আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়াদে নগরীতে স্থাপন করা হয়েছে ৪টি অপ্রয়োজনীয় ওভারব্রিজ। এগুলো কাজে তো আসেইনি বরং নাগরিকদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।