নাঙ্গলকোটে দু‘টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের তিন বছরের মধ্যে শুরুতেই ভবন দু‘টির বেহাল দশা বিরাজ করছে

নাঙ্গলকোটে দু‘টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের তিন বছরের মধ্যে শুরুতেই ভবন দু‘টির বেহাল দশা বিরাজ করছে। ভবন দু‘টির মূল ভবনের  পিলারে ফাটল সৃষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কক্ষের ভিতরের দেয়ালে ফাটল, ফ্লোরের ইট, বালু, সিমেন্ট উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি, ছাদের পলেষ্টার উঠে গিয়ে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোর রং উঠে যাওয়া, বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ না করা, ভালোভাবে গ্রিল না লাগানো, জানালার গ্লাস না লাগানো এবং দ্বিতীয়তলা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পিছনের দেয়ালে হোলসিম না দেওয়ায় ভবন দু‘টি অরক্ষিত থাকায় যে কোন মূহুর্তে দুর্ঘটনায় শিশুদের প্রাণহানির মতো ঝুঁকি রয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন সংকটে ঝুঁকিপূর্ণ নতুন দু‘টি বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা এক রকম বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। 


বিদ্যালয় দু‘টি হচ্ছে, উপজেলার পেড়িয়া ইউনিয়নের বড়স্বাঙ্গিশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মৌকরা ইউনিয়নের বিঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  এনিয়ে বড়স্বাঙ্গিশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহিনা আক্তার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি বলে তিনি জানান। এদিকে, বিঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৎকালীন শিক্ষা অফিসার মিনহাজ উদ্দিন সরেজমিনে বিদ্যালয়ের নির্মিত নতুন ভবনটি পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের অসম্পূর্ণ এবং নিম্নমানের কাজের অভিযোগ এনে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেনের নিকট অভিযোগ করেন। পরে ইসমাইল হোসেন সরেজমিনে ভবনটি পরিদর্শন করে নিম্নমানের কাজ ও অসম্পূর্ণ ভবন নির্মাণের সত্যতা পান বলে জানা যায়।

জানা যায়, বিদ্যালয় দু‘টির নির্মাণের সাব ঠিকাদার উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সুমন ভবন দু‘টির নিম্নমানের কাজ এবং অসম্পূর্ণ কাজ রেখে ক্ষমতার দাপটে ভবন দু‘টির নির্মাণ কাজের সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। ২০২২ সালের শেষের দিকে বিঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রেখে এবং বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতিকে ম্যানেজ করে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সুমন সম্পূর্ণ বিল উত্তোলন করে নিয়ে যান।

নিরাপত্তা গ্রিল না থাকায় বিদ্যালয়টি একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। নির্মাণের গত তিন বছরের মাথায় বিদ্যালয়টিকে একটি পরিত্যক্ত ভবন মনে হয়। সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়টির নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পান। এখানেই শেষ। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর কোনো সুফল পাননি বলে জানা যায়।

অন্যদিকে,একই ঠিকাদারের অধীনে নির্মিত উপজেলার বড়স্বাঙ্গিশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিরও  নতুন ভবনের বেইস থেকে মূল পিলারে ফাটল সৃষ্টিসহ ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল সৃষ্টি,  বারান্দার নিচে ফাটল, বৈদ্যুতিক লাইন এবং সরঞ্জাম খোলা, ভবনের রং উঠে যাওয়া, ছাদ এবং বারান্দার পলেষ্টার উঠে যাচ্ছে। সরেজমিনে বিদ্যালয় ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনটির মূল পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ভবনের বারান্দার নিচে ফাটল, বারান্দা এবং ছাদের পলেষ্টার উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি এবং স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা দেখা যায়। সিঁড়িগুলো খুব নড়বড়ে অবস্থায় দেখা যায়। ছাদে উঠলে ভবনটি দুলতে থাকে। ভবনের রং উঠে বিবর্ণ অবস্থায় দেখা যায়। ছাদের সাথে একটি কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লাগানো হয়নি। ভবনের বিভিন্নস্থানে ফুটো দেখা যায়। পা এবং হাতের খসায় ছাদের পলেষ্টার উঠে যাচ্ছে। ভবনের পিছনে মাটি ফেলা হয়নি। ভবনের পিছনে এবং উপরে-নিচে ভালোভাবে রং করা হয় নাই। ভবনটি যে কোন মুহূর্তে ধ্বসে পড়ে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।