২য় বিশ্বযুদ্ধের সংকটকালীন সময়ে ঐ অঞ্চলের জ্ঞানান্বেষণ কারী মহৎ ব্যক্তিরা উদ্যোগ নিয়ে হাওরাঞ্চলের মানুষের জন্য শিক্ষার দ্বার খোলে দিতে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাইভেট কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয়ে স্বমহিমায় শিক্ষার আলো বিস্তার করে। দীর্ঘ ৩৬ বছর ১৯৮০ সালে কলেজটিকে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ সরকার। ফলে শিক্ষার বিস্তার আরো বেগবান হয়।এই কলেজটি হাওর অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা সংস্কৃতি, সাহিত্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান বিকশিত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে! প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানা যায় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ২০১৯ সালে গৌরবময় প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। ৭৫ বর্ষপূর্তি কে কেন্দ্র করে প্লাটিনাম জয়ন্তী উৎসব পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে বছরেই বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় প্লাটিনাম জয়ন্তী ও পুণর্মিলনী উদযাপন পরিষদ।কিন্তু বিশ্বব্যাপী কভিট-১৯' মহামারীসহ নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে সময় মতো অনুষ্ঠানটি করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এখন সময় সুযোগ তৈরি হওয়ায় উদযাপনের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে!
উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী ও সদস্য সচিব এডভোকেট মনিষ কান্তি দে মিন্টু ( কলেজ ছাত্র সংসদের সর্বশেষ ভিপি) জানিয়েছে গৌরবের ইতিহাস সৃষ্টিকারী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্লাটিনাম জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছেন তাঁরা। অনুষ্ঠানটি প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মহা মিলন মেলায় পরিণত হবে বলে প্রত্যাশা তাঁদের! শহরের গুণীজনেরা জানান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কলেজটি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে সর্বজন সমাদৃত হয়েছে। সৃজনশীলতার বিকাশ, মেধা, ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের চর্চার মধ্য দিয়ে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের চেতনাকে ধারণ করে চলা এই কলেজ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার পাথেয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে সবসময়; বিবেচিত হচ্ছে আজও। এই কলেজেরই চার জন ছাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়েছেন। প্রাক্তন অনেক ছাত্র আছেন যারা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিকামী সকল আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন এবং এখনো রাখছেন! কলেজের ৭৫বর্ষপূতি উৎসবকে সামনে রেখে প্রাক্তনরা নিজেদের সোনালি অতীত মনে করে উৎপোলিত হচ্ছেন এবং বর্তমানারও তাঁদের সময়ে ৭৫ বর্ষপূর্তি হওয়ায় আনন্দিত।
সুনামগঞ্জ-কে বলা হয় জ্যোৎস্নার শহর, সম্প্রীতি-সংস্কৃতির শহর বা বাউলের রাজধানী। এই সুনামগঞ্জে জন্ম নিয়েছেন মরমী কবি হাসন রাজা, রাধা রমণ দত্ত, পন্ডিত রামকানাই দাশ, শাহ্ আব্দুল করিম, দুর্বিন শাহ্ সহ আরও অনেক গুণী বাউল, কবি ও সাধকেরা। প্রখ্যাত প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ ও একুশে পদক প্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ এই কলেজেরই প্রাক্ত শিক্ষার্থী। আয়োজন কমিটির সদস্যরা জানান সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে সর্বদা শান্তি আর সম্প্রীতির রাজনীতি বিরাজমান ছিলো। সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছিলো সম্প্রীতির বন্ধন। এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক বিষ-বৈষম্য ছিলো না। তারা প্রত্যাশা করেন , ভবিষ্যতে ভ্রাতৃত্বের এ বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব এডভোকেট মনিষ কান্তি দে মিন্টু ১৩ জানুয়ারীর প্লাটিনাম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে নিবন্ধনকৃত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান কে সাফল্যমণ্ডিত করার আহবান জানিয়েছেন। আয়োজন কমিটি মনে করেন তাঁদের পরিশ্রম সফল হবে যদি সকলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৩ জানুয়ারী মুখরিত করেন ক্যাম্পাস। দিনব্যাপী আনন্দঘন আয়োজনের অংশ হিসেবে ঐ দিন সন্ধায় সঙ্গিত পরিবেশন করবেন জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া সহ অন্যান্য অতিথি শিল্পীরা।