ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে যেখানে রাজধানীর মানুষ ছুটছে নাড়ির টানে- বাড়ির পানে, সেখানে ঢাকা কলেজের আবাসিক কিছু শিক্ষার্থী এখনো অবস্থান করছেন হলে। 

সামনে কারও ফাইনালসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, কারো বিসিএসসহ নানা চাকরির পরীক্ষা। আবার কেউ কেউ পাস করে দীর্ঘদিন চাকরি না পেয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত এসব শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদেরও মন চায় ঈদে বাড়ি যেতে। কিন্তু নানা বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে তাদের অনেককে ক্যাম্পাসেই ঈদ করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়, কলেজের ৮টি হলের মধ্যে প্রতিটি হল থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছেন। তবে ঈদের আর মাত্র ২-৩ দিন বাকী থাকলেও এখনো প্রতিটি হলে কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। এরমধ্যে থেকেও কিছু আজ-কালের মধ্যে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। আর বাকীরা হলে থেকেই পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
ঈদেও ঢাকা কলেজের এসব শিক্ষার্থীদের বাড়ি না যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। কারো সামনে পরীক্ষা, কারো পাস করে বেকার হয়ে থাকা, আবার কেউ কেউ অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় ঈদে বাড়ি যেতে আগ্রহী হন না। 
এ বিষয়ে উত্তর ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, " মুসলমানদের অন্যতম প্রধান উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। রমজানের শুরু থেকেই বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। প্রতিবছর হলের অল্পসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ঈদে বাড়ি না যাওয়ার উদাহরণ পরিলক্ষিত হয়। ঈদে বাড়ি না যাওয়ার কারণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন। তবে মোটাদাগে চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ি না যাওয়ার প্রবণতা বেশি। চাকরি প্রার্থী শিক্ষার্থীরা তাদের বৃহৎ আনন্দের স্বার্থে ঈদের আনন্দকে বিসর্জন দেয়। পাশাপাশি ঈদের পর প্রথম সপ্তাহেই ফাইনাল পরীক্ষা আছে অনেকের, তাদের অনেকের বাসা দূরে হওয়ায় বাসায় যাওয়া এবং পরীক্ষার আগে ক্যাম্পাসে আসা কষ্টকর হয়ে যায়। তাই তারাও যাচ্ছে না। এসব কারণেই অনেকে হলে অবস্থান করে।"
উত্তর ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম মর্নিং পোস্টকে তার বাড়িতে না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, " আমি পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য পপুলার হাসপাতালে পার্টটাইম জব করছি। হাসপাতালে যেহেতু সবাইকে একসাথে ছুটি দেওয়ার নিয়ম নেই। আর আমি সহ অনেকেই ঈদের ছুটি পাব না, তাই ঈদ পরিবারের সাথে করতে পারছি না। "
ঈদের পরে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারণে ক্যাম্পাস ঈদ উদ্‌যাপন করবেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজিদ ভূঁইয়া। তিনি মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা চলতেছে। সেশনজট এড়ানোর জন্য আমাদের পরীক্ষা দ্রুত হচ্ছে। বাকি পরীক্ষাগুলো ছুটির পর হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি যাতে ভালোভাবে নেওয়া যায়, সে জন্য ঢাকায় থাকা। এমনিতে পরিবার ছেড়ে আমার এই প্রথম ঈদ উদ্‌যাপন হবে। বিষয়টা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা, সঙ্গে মন তো একটু খারাপ লাগবেই!"
হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর ছাত্রাবাসের হল সুপার অধ্যাপক ইকবাল শাওন বলেন, " সাধারণত ঈদে সবাই চায় গ্রামে যাইতে। কিন্তু তারপরেও অনেকে হয়তো বিভিন্ন সমস্যার কারণে থেকে যায়। সংখ্যাটা খুবই কম। আর এর আগে যদিও কোনো ধরনের ব্যবস্থা ছিল না তবুও আমরা এ বিষয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলব। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।"