৩ মে (শনিবার) বরিশালের হিজলা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব ইলিয়াস সিকদারের আদেশ অমান্য করে সরকারি রাস্তার উপর জবরদখল করে নির্মাণ করা হয়েছে একটি শৌচাগার

৩ মে (শনিবার) বরিশালের হিজলা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব ইলিয়াস সিকদারের আদেশ অমান্য করে সরকারি রাস্তার উপর জবরদখল করে নির্মাণ করা হয়েছে একটি শৌচাগার। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ৩০০ গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পল্টন থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মনির সরদার ও তার ভাই, একই ওয়ার্ডের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর সরদার এই নির্মাণ কাজের মূল হোতা। অভিযোগ রয়েছে, তারা উভয়েই অতীতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে স্থানীয় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিলেন এবং ৫ আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মনির সরদারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রামবাসীদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর তারা এম্বুলেন্স ভাড়া করে “অসুস্থ” সাজিয়ে গ্রামে ফেরে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে রাস্তার ওপর নির্মাণকাজ শুরু করে।
৬০ বছরের নুরজাহান বেগম বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমরা যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করি, তার বেশিরভাগ আগেই দখল করেছে জাহাঙ্গীর সরদার। এবার বাকি অংশেও শৌচাগার তৈরি করে চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছেন।”
৭২ বছরের ধলু জমদার জানান, “এই একটি রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩০০ জন মানুষ চলাচল করে। এখন আমরা কার্যত বন্দি। টাকার ও ক্ষমতার কাছে আমরা অসহায়।”
বিষয়টি জানার পর ইউএনও ইলিয়াস সিকদার উপজেলা স্যানিটারি অফিসার সহিদুর রহমানকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি বলেন, “আমি ইউএনও স্যারের প্রতিনিধি হিসেবে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে উভয় পক্ষকে ৪ মে স্যারের অফিসে উপস্থিত হতে বলি। কিন্তু আমি চলে আসার পর আবারো কাজ শুরু করে। পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়, যদিও তখন পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষ।”
এ বিষয়ে ইউএনও ইলিয়াস সিকদার বলেন, “সরকারি রাস্তা বন্ধ করার অধিকার কারো নেই। আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা একাধিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ - ধারা ১৮৮:সরকারি কর্মচারীর আদেশ অমান্য করলে এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। ইউএনও’র নির্দেশ অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাওয়া এই ধারায় দণ্ডনীয়।দখলবাজি প্রতিরোধ আইন, ১৯৫২:সরকারি রাস্তা বা সম্পত্তি জবরদখল করা দণ্ডনীয় অপরাধ, এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে উচ্ছেদ ও জরিমানা করতে পারে।স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯:ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাস্তা বা জমি অবৈধভাবে ব্যবহার বা দখল করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারি সম্পত্তি দখল এবং জনসাধারণের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাটি শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, এটি একটি স্পষ্ট সামাজিক অবিচার। হিজলার সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছে।