পৃথিবীর বুকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুবারই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পারমাণবিক বোমা। আর সেই দুবারই জাপানে। এর মধ্যে ৬ আগস্ট হিরোশিমায় ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে। তবে হিরোশিমা নিয়ে এত বেশি আলোচনা হয় যে, আড়ালেই থেকে যায় নাগাসাকির ভয়াবহতা। কিন্তু হিরোশিমার চেয়ে নাগাসাকির দুঃখ কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের যে দুটি শহরে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, নাগাসাকি তার মধ্যে একটি। ৬ আগস্ট হিরোশিমার পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে হামলা হয়।
নাগাসাকিতে যে বোমা ফেলা হয়েছিল, তার নাম ‘ফ্যাট ম্যান’। বোমাটি হিরোশিমায় ফেলা ‘লিটল বয়ের’ চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। এতে মানুষ মারা যায় হিরোশিমার অর্ধেক, ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন। আহত হয়েছিলেন ৭৪ হাজারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিভাগ বলছে, নাগাসাকির বোমাটি ছিল প্লুটোনিয়ামের। এটি ফেলার জন্য আলাদাভাবে সরকারি নির্দেশনার প্রয়োজন হয়নি। এর আগে ২৫ জুলাই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তাতেই এ ব্যাপারে বলা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান এমন নির্দেশই দিয়েছিলেন।
নাগাসাকিতে তখন সকাল ১১ টা ২ মিনিট। মাটি থেকে ১ হাজার ৬৫০ ফুট ওপরে তখন ‘ফ্যাট ম্যান’। পর মুহূর্তেই তা ফেলা হয় শান্তশিষ্ট শহর নাগাসাকিতে। বাসিন্দারা ভাবতেই পারেননি, মাত্র তিনদিন আগে যে ভয়াবহতা নেমেএসেছিল নাগাসাকিতে, সেটি নেমে আসবে তাদের ওপরও। এর ওজন ছিল ২১ কিলোটন, যা লিটল বয়ের চেয়ে ৪০ শতাংশ ভারী। হিরোশিমা দিবস: যেদিন দানবের রুপ নিয়েছিল মানুষ হিরোশিমা দিবস: যেদিন দানবের রুপ নিয়েছিল মানুষ দিনটির কথা মনে করে নাগাসাকির বাসিন্দা ফুজি উরাটা মাতসুমোতো বলেন,‘আমার বাড়ির সামনের কুমড়া খেতএকদম নাই হয়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ট ছিল না, কেবল সেখানে একটি নারীর মাথা পড়ে ছিল। মুখের দিকে তাকালাম, আমি তাকে চিনি কি-না। না, আমি চিনি না। ৪০ বছর বয়সী ওই নারী নিশ্চয়ই শহরের অন্য কোথাও থেকে এসেছে।’
আগেই সতর্কবার্তা জারির কারণে এখানে মানুষ মারা যায় কম। অনেককে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এরপরও প্রায় ১১ হাজার ৫৭৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ৬ হাজারের বেশি ঘর। ১৮ হাজারের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছিল। মাত্র ১২ শতাংশ বাড়ি টিকে ছিল শহরে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, এ হামলায় নাগাসাকির প্রায় ৪৩ হাজার বর্গমাইল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায় ৪০ হাজার মানুষ। পরবর্তী এক বছরে নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
বোমার তেজস্ক্রিয়তার কারণে এর পরের পাঁচ বছরে আরও ৭০ হাজার মানুষ মারা যায় বলে দাবি করে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তিন দিন আগেই ভয়াবহতা দেখেছে বিশ্ববাসী। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। দানবের রূপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সে চিত্রই জড়িয়ে আছে নাগাসাকির সঙ্গে। ৬ আগস্ট হিরোশিমা দিবসের মতো ৯ আগস্টও পালন করা হয় নাগাসাকি দিবস। সেই দানবের চরম বিধ্বংসী রূপ যাতে আর দেখতে না হয়, সে বার্তা পৌঁছে দিতেই দিনটি পালন করা হয়।