রাজধানীর মিরপুর সড়ক ধরে যারা নিয়মিত চলাচল করেন, তারা পরিচিত সোবহানবাগ জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের সঙ্গে। মসজিদের একটি অংশ রাস্তার ওপরে হওয়ায় এখানে মিরপুর রোড সংকুচিত হয়ে গেছে।

বহু বছরের এ চিত্র এবার বদলে যাচ্ছে। রাস্তার জন্য ১৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এর বদলে পুরাতন তিনতলা মসজিদটি ভেঙে নতুন ১০ তলাবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে পুরাতন ভবনটি ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন করে নির্মাণের জন্য সোবহানবাগ মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আগের মসজিদের আয়তনের সমপরিমাণ জায়গা নিয়ে বেষ্টনী দেয়া আছে পুরো প্রকল্প এলাকা। এর ভেতরে চলছে নতুন ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ।

প্রকল্প এলাকার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাইলিংয়ের জন্য বড় বড় যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। নিজেদের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা।

এখানে কথা হয় প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, একটি অস্থায়ী ভবন করে মসজিদ ও মাদ্রাসার কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়েছে গত বছরের শেষের দিকে। এরপর পুরাতন ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন সবেমাত্র ১০ তলা ভবনের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। পুরো ভবন নির্মাণে দুই বছরের মতো সময় লাগবে।

প্রকল্প এলাকা থেকে মূল সড়কের জন্য ১৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানান মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘১৩ ফুট জায়গা ছেড়ে নতুন মসজিদ করা হচ্ছে। আমরা কাজের সুবিধার্থে এখনই ১৩ ফুট জায়গা ছাড়িনি। কাজ কিছুটা গুছিয়ে তারপর রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেয়া হবে।’

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আরো জানান, নকশা অনুযায়ী ১০ তলা এই মসজিদে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। এতে জেনারেটর, লিফট, আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, সোলার প্যানেল সিস্টেম, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, এয়ারকুলার, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাসহ আরো অনেক ব্যবস্থাপনা থাকবে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

১৯৩৭ সালে প্রায় ৩৫ শতাংশ জমির ওপর সোবহানবাগ মসজিদ ও পাশে পারিবারিক কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা মোহাম্মদ আবদুস সোবহান। ১৯৪০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মারা গেলে আবদুস সোবহানকে এই কবরস্থানেই দাফন করা হয়। তিনতলা এই মসজিদে এক সঙ্গে ৬০০ থেকে ৭০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। এখন নতুন ভবন হলে সেখানে অন্তত ৪ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন।

প্রকল্পের ঠিক পাশেই মসজিদের অস্থায়ী ভবন করে দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তিনতলা একটি ভবনে চলছে মসজিদ ও মাদ্রাসার কার্যক্রম। এখানে প্রায় ৭০ জন মাদ্রাসা ছাত্রের থাকা-খাওয়া-পড়াশোনার পাশাপাশি সাধারণ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন।

সোবহানবাগ মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক মো. আলাউদ্দীন নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মসজিদ কমিটিকে একটি চিঠি দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, সরকার মসজিদটিকে আরও বড় করতে চায়। তবে রাস্তার জন্য কিছুটা জায়গা ছাড়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। তখন মসজিদ কমিটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

মো. আলাউদ্দীন আরো বলেন, ‘মসজিদটি ৮৩ বছর আগে নির্মিত। তখন তো মিরপুর সড়ক এত চওড়া ছিল না। আর মানুষের সংখ্যাও কম ছিল। তখন মসজিদটি তিনতলা পর্যন্ত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বেড়েছে। মুসল্লিদেরও চাপ বেড়েছে। একসময় বাড়তি চাপের কারণে রাস্তায় দাঁড়িয়েই মানুষ নামাজ পড়া শুরু করে, এতে যান চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়।

'অন্যদিকে মসজিদের ভিত্তি পুরাতন ও দুর্বল থাকায় এটি আর ওপরের দিকে বাড়ানো সম্ভবও হচ্ছিল না। সব কিছু বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে মসজিদ কমিটি রাজি হয়। কারণ মসজিদ তো মানুষের জন্যই, আবার রাস্তাও মানুষের জন্য। তাহলে মানুষে মানুষে অসুবিধা তৈরির দরকার কী?’