নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের এক যুবক সোহান মিয়া (২৫) দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির আশায় রাশিয়া গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে। সোহানকে রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়, যেখানে যুদ্ধকালীন এক বোমা বিস্ফোরণে তিনি মারা যান।

গত শনিবার (২১ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সোহানের বন্ধু ও সহযোদ্ধা জাফরের ফোনে সোহানের মৃত্যু সংবাদ আসে তার পরিবারের কাছে। জাফর ফোনে সোহানের মাকে তাঁর মরদেহের ছবি পাঠান। এই হৃদয়বিদারক খবরে সোহানের বাড়ি ও গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোহান ও তাঁর বোনজামাই আকরাম মিয়া সাইপ্রাসে চাকরির আশায় ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলসের মাধ্যমে জেরিন নামের এক নারী দালালের সাথে যোগাযোগ করেন। চুক্তি অনুযায়ী ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। পরে তাদের রাশিয়ার ভিসা দেওয়া হয় এবং ২০২৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ১০ জনের একটি দল নিয়ে রওনা হন রাশিয়ার উদ্দেশ্যে।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ৪ দিন রাখলেও, পরদিন সোহানসহ আরও দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় রুশ সেনা ক্যাম্পে। সেখানে শুরু হয় প্রশিক্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন। সেনাবাহিনীর পোশাক পরিয়ে বাধ্য করা হয় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। বাধা দিলে দেওয়া হয় মৃত্যুর হুমকি।

সোহান সেই ক্যাম্প থেকে তাঁর বোনজামাই আকরামকে পালিয়ে যেতে বলেন। আকরাম কৌশলে পালিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। কিন্তু সোহান থেকে যান মৃত্যুর ময়দানে। তার মা নূরুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “ধারদেনা করে সাত লাখ টাকা দিয়ে একমাত্র ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি, এখন তার লাশের খবর এলো। ওর একটাই স্বপ্ন ছিল — ভালো কিছু করার, কিন্তু দালালেরা তাকে মেরে ফেলল।”

সোহানের স্ত্রী হাবিবা আক্তার ও মাত্র ১৬ মাস বয়সী ছেলে ফারহান এখন পুরোপুরি অসহায়। তার মা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, দালাল চক্রকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হোক।