আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকবে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিংগা ক্যাম্পে এসাসিনেশনের শিকার হন Arakan Rohingya Society for Peace and Human Rights (ARSPH) এর চেয়ারম্যান ‛মুহিবুল্লাহ’। তাকে গুলি করে হ ত্যা করা হয়। 

মুহিবুল্লাহ ছিলেন রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে ভাইটাল ভয়েস। দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে তিনি রোহিংগা প্রত্যাবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। রোহিংগাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনিই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিলেন, যার দরুন একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বিরাগভাজন হন তিনি। 

মহিবুল্লাহর এসাসিনেশনের পর নূর কামাল এবং ইলিয়াস সমিউদ্দিন নামে দুই ব্যক্তিকে এরেস্ট করে RAB-15, তদন্তে জানা যায় এরা রোহিংগা স্যালভেশন আর্মি- আরসার সদস্য। এছাড়া নিহত মুহিবুল্লাহর আপন ভাই হাবিব উল্লাহও দাবি করেছিলেন, তার ভাইয়ের হ ত্যা র পেছনে আরসার হাত ছিল। 

উক্ত মুহিবুল্লাহ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার ডাকে 2019 সালে প্রায় লক্ষাধিক রোহিংগা একত্রিত হয়েছিল প্রত্যাবর্তনের জন্য। তখন থেকেই মুহিবুল্লাহ ডেথ থ্রেট পেয়ে আসছে। 

মূলকথা, মুহিবুল্লাহ ছিল রোহিংগাদের দেশে ফেরার পক্ষে এবং আরসা সবসময়ের জন্যই রোহিংগাদের দেশে ফেরার বিপক্ষে কাজ করছে।

সতেরো সালে রোহিংগাদের উৎখাতের সময়ও মিয়ানমার জান্তা আরসার সাথে ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন ঘটিয়ে রোহিংগাদের উপর ম্যাসকার চালানোর জাস্টিফিকেশন তৈরি করে নেয়; যদিও বর্তমানে আরসা পরিস্থিতিতে চাপে জান্তা এবং আরাকান আর্মি― দুই গ্রূপের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছে। তবে রোহিংগাদের নিজ ভূমিতে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে তারা এখনও আগের সিদ্ধান্তে অনড়। 

যেহেতু বাংলাদেশ ইন্টারেম গভমেন্ট রোহিংগাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে জোর কদমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাই রোহিংগা প্রত্যাবর্তন বিরোধী যে কাউকে নিউট্রালাইজ করতে গভমেন্ট দুইবার ভাববে না এটাই স্বাভাবিক। 

তবে এই মুহূর্তে আরসা প্রধান গ্রেফতারের মাধ্যমে বাংলাদেশ মূলত কাকে বার্তা দিতে চাইলো.?

গত পরশু বাংলাদেশ সফর শেষ করা জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের নিকট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে হিউম্যানিটেরিয়ান এইড পাঠানোর জন্য একটি করিডোর চেয়ে গেছেন। অফিসিয়ালি এই করিডোর সম্প্রতি চাওয়া হলেও ইতিমধ্যেই করিডোর এস্টেবলিস হয়েছে এবং খুব সম্ভবত একাধিক চালান রাখাইনে গেছে। আর এই করিডোর ব্যবহারে অন্যতম থ্রেট আরসা কারন তারাও একই রুট ব্যবহার করে। কিন্তু একই রুটে দুটো পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠী এক্সিস্ট করা সম্ভব নয়। 

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব যেতে না যেতেই আজ ইউএস সিনেটর এন্ড চিফ অব আর্মস ডিল ম্যানেজমেন্ট- গ্যারি পিটার্স দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। তার বাংলাদেশে অবস্থানকালেই রোহিংগাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর অন্যতম বাধা আরসা প্রধানের গ্রেফতার চীনের প্রতিই সম্ভাব্য বার্তা হিসেবে পরিগণিত হবে। অর্থাৎ এই ঘটনার মাধ্যমে মাধ্যমে চীন সফরের তাৎপর্য আরো এক ধাপ বৃদ্ধি পেলো।