সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সানজিদা আফরিনকে বারিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বরখাস্তের পর তিনি বারিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।
সানজিদা আফরিনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক দুটি হত্যা মামলার তদন্তে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এই মামলাগুলোতে সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের রক্ষার চেষ্টা করেন। তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় সানজিদা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন বলে জানা যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, "জনস্বার্থে সানজিদা আফরিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। বরখাস্তকালীন তিনি সরকারি বিধি অনুযায়ী ভাতা পাবেন এবং বারিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন।" ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ আলী এবং হকার মো. শাহজাহানের হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনাটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঘটে এবং তৎপরবর্তী তদন্তে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসে। পরবর্তীতে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আরিফ প্রতিবেদনের সময় সানজিদার নির্দেশে বাধাপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এটি প্রথমবার নয়, যখন সানজিদা আফরিন বিতর্কের মুখে পড়লেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় তিনি আলোচনায় আসেন। এই ঘটনায় তার স্বামী আজিজুল হক মামুন এবং এডিসি হারুন অর রশীদের নামও জড়ায়। তখন সানজিদা দাবি করেছিলেন, এডিসি হারুন নির্দোষ এবং পুরো ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে এ ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।
সানজিদা আফরিনের সাম্প্রতিক বরখাস্ত প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং আইনপ্রয়োগের কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তার ভবিষ্যৎ কর্মজীবন এবং এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে কৌতূহল রয়েছে। সময়ই বলে দেবে, এ ঘটনায় প্রশাসনের গ্রহণযোগ্যতা কতটা প্রভাবিত হবে এবং সানজিদা আফরিনের পেশাগত জীবন কোন পথে এগোবে।