বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি থাকায় কোলের শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদেরকে অন্যত্র পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন অভিভাবকরা। রাস্তাঘাট পানিবন্দি ও চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দীর্ঘদিন ধরে বদ্ধ নোংরা পানি ব্যবহার করায় পানিবাহিত রোগের উপদ্রব বেড়েছে কয়েকগুণ। খালে বিলে থাকা সাপ সহ বিষাক্ত পোকামাকড় ঘরে এসে ঠাঁই নিয়েছে। পানিবন্দি নিরুপায় মানুষ নিরাপত্তার কথা না ভেবে এসব বিষাক্ত প্রাণীর সাথে দিনের পর দিন বসবাস করছে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি থাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে চরমভাবে। অধিকাংশ ল্যাট্রিন পানির নিচে থাকায় অনেকেই রাস্তার ধারে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। এতে এলাকায় দুর্গন্ধ সহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তাছাড়া সুপেয় পানির অভাব তীব্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অজপাড়া গাঁয়ে প্রশাসনিক কোন যোগাযোগ না থাকায় ২০২৫ সালে এসেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এখানকার শিশুরা পশ্চাৎপদ পরিবেশ ও বৈরী আবহাওয়ায় বেড়ে উঠছে।
সরজমিনে বড়দল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের উত্তর বাইনতলা গ্রামের পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত সালাম মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার উঠান হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। মাটির বসতঘরের খুঁটির নীচে পানি জমে থাকায় কয়েকটি খুঁটি নড়বড়ে হয়ে ঝুঁকে পড়েছে। গরুর গোয়ালে যেতে উঠানেই সাঁকো তৈরি করেছেন। টিউবওয়েল এর মুখ পর্যন্ত পানি। ল্যাট্রিনে যেতে হয় ওই হাঁটু পানি পার হয়ে। পাশের বাড়ির সামাদ মোল্লার বাড়ির অবস্থা একি রকম। তার ধানের গোলার নীচে পানি জমে আছে। নিরাপত্তার অভাবে কোলের শিশুদের নানাবাড়ি পাঠানো হয়েছে। গোয়াল ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় গবাদিপশু অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে অনেক আগেই।
বৃদ্ধা রিজিয়া খাতুন বলেন, এখানে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। যার পাকা বাড়ি বা টিনের ছাউনি আছে শুধু তারাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে পারে। সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমের বাড়ির সামনে গত ৩ বছর আগে একটি পানির প্লান্ট বসানো হয়। ৬ মাস যেতে না যেতেই সেটা বন্ধ করে হয়ে যায়। এখন প্লান্টের মোটরে একজন তার ব্যক্তিগত মৎস্য ঘেরে পানি উত্তোলন করে আর প্লান্টের বিদ্যুৎ বাড়িতে ব্যবহার করে।
মামুন মোল্লা বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থার দুরাবস্থার কারণে এখানকার কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ এ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। লক্ষীখোলা নামক স্থানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও সেটা নিজেই জ্বরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যে সেখানে কেউ যেতেই চায়না। আবার গেলেও প্রয়োজনীয় কোন ঔষধ পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার হাসান আলী মোল্লা বলেন, উত্তর বাইনতলা গ্রামের পানিবন্দি প্রায় এক হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য ফজলু মোল্লার বাড়ির সামনে চেউটিয়া খালের উপর একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে মাছ ও ধান চাষ করায় বৃষ্টির পানি ছাপিয়ে ছাড়া কালভার্টে যেতে পারে না। এ জন্য কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসে অতিদ্রুত একটা সমাধানের চেষ্টা করবো।
ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক আক্তার ফারুক বিল্লাহ বলেন, জনগনকে সাথে নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। তবে ওই ওয়ার্ডের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পানিবন্দি ৩ শতাধিক পরিবারের লোকজন।###