পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র ৭ দিন। ঈদকে সামনে রেখে যার যার সামর্থ অনুযায়ী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে দোকান সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখনও জমে উঠেনি সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাটের ঈদ বাজারের কেনাকাটা। হতাশা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের শেষের দিকে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা। বৃহস্পতিবার (১৩) এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে-ক্রেতাদের আশানুরূপ তেমন ভিড় নেই। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা উপস্থিতি ও বেচাকেনা অনেকটা ঢিলেঢালা। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আশানুরূপ কেনাকাটা না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরই বাজারে নতুন ডিজাইনের পোশাক আসে এবং এ সময় বেচাবিক্রিও অনেক বেশি হয়।
সেই আশায় অধিক পূঁজি খাটিয়ে চাহিদা অনুমান করে আমরা মালামাল ক্রয় করি। হঠাৎ জামা-কাপড়, জুতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ বছর ক্রেতা খুবই কম। কিছু ক্রেতা আসলেও তারা দাম শুনে পণ্য না কিনে চলে যাচ্ছেন। বেশি দাম দিয়ে পণ্য কেনার কারণে আমরাও কম দামে ছাড়তে পারছি না। তবে রমজানের শেষদিকে বেচা বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদী আমরা। জাফলং বাজারের রাজ ফ্যাশন এর স্বত্বাধিকারী হাজী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন (আলম) বলেন, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এ বছর ক্রেতাদের তেমন ভীড় দেখা যাচ্ছে না। ঈদে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর মালামাল ক্রয় করে রেখেছি। গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। আমাদের কিছু পরিচিত কাস্টমার আছে যারা প্রতি বছর আমাদের এখানে থেকে ক্রয় করে তাদেরও এখনও মার্কেটে আসতে দেখিনি। তবে এখনও কয়েকটা দিন সামনে আছে, শেষের কয়েকটা দিন বেচা কেনা জমে উঠে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি আরোও বলেন প্রত্যেকটা দোকানি তাদের চাহিদা অনুমান করে আগে থেকেই মালামাল কিনে রাখে।
শবে বরাতের আগে বেচাবিক্রি মোটামুটি ভাল দেখে আমাদের ধারণা ছিল এ বছর ঈদের সময় বেচাবিক্রি বাড়বে। সে হিসেব করেই আমরা অনেক মালামাল কিনে রেখেছি বিক্রয়ের জন্যে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে অনেক বেচাকেনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় এ বছর বেচাকেনা তেমন না থাকলেও গতবছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কম হচ্ছে ঠিকই কিন্তু একেবারে যে বিক্রি হচ্ছে না তা না।আমার দোকান রাজ ফ্যাশন এ আল্লাহর রহমতে মোটামুটি আনন্দময় নিয়ে ভালো বিক্রি করিতেছি। আশানুরূপ অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতিও থাকে ভালই। বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার জন্য বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বছরও আমাদের প্রস্তুতি সেই ভাবেই ছিল। কিন্তু ক্রেতা উপস্থিতি খুব কম এ বছর। সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত একটু ভিড় থাকলেও দাম শোনার পর কেনার আগ্রহ পাচ্ছেন না অনেকেই। মার্কেটে আসা ক্রেতা মারোপ বলেন, এসেছিলাম পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে। এবছর যা দাম তাতে করে শুধু বাচ্চাদের জন্যই কিনব।
স্বল্প আয়ে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কেনা সম্ভব হচ্ছে না। অপর ক্রেতা আশরাফুল রোজার শুরু প্রাই সবগুলো মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখছি। এ বছর প্রতিটি জিনিসের দামই বাড়তি। অনেক সময় জামা প্যান্ট পছন্দ হচ্ছে কিন্তু দামে হচ্ছে না। বেশ কিছু দোকান ঘুরে পছন্দ মত জিনিস ও দামে মিলে গেলে কিনতেছি। গোয়াইনঘাটের উপজেলা আমরা বাজার ঘুরে দেখেছি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ কোন পণ্যেরই তেমন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা যেন কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনদের কে লক্ষ্য রাখার আহাব্বান জানাচ্ছি । রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে যাতে কোন অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা না করতে পারে সেজন্য বাজার মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করার জন্য আহব্বান জানাচ্ছি। এসব অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি, মূল্য তালিকা না থাকা, ক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলে বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক, স্বাভাবিক, স্থিতিশীল এবং সরবারহ নিশ্চিত করতে এ ধরণের তদারকী নিয়মিত অব্যাহত থাকলে ভালো হবে মনে করেন সাধারণ মানুষ।