দেশের সর্ববৃহৎ পোশাক শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ ও মালিকদের অভ্যন্তরীণ জটিলতায় গত কয়েক মাসে অতন্ত্য ৪০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

দেশের সর্ববৃহৎ পোশাক শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ ও মালিকদের অভ্যন্তরীণ জটিলতায় গত কয়েক মাসে অতন্ত্য ৪০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এতে করে চাকরিচ্যুত হয়েছে এ শিল্পাঞ্চলের কমপক্ষে ২০ হাজারেরও অধিক পোশাক শ্রমিক।আর এসব চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের মধ্যে অনেক নারী শ্রমিকেরা গাজীপুরের আশেপাশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় বিভিন্ন কলাকৌশলে কর্মের ব্যবস্থা করতে পারলেও বৃহৎ অংশের শত-শত পুরুষ শ্রমিকেরা আজও কোন চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি।
অনেকেই বাসা ভাড়া ও দোকানের পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় গ্রামের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। আর যারা গ্রামের বাড়িতে এসে কিছু করার মতো নেই বলে গাজীপুরে থেকেই বিভিন্ন জটিকা কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোন রকমে পরিবার নিয়ে রয়েছেন।
এসব কর্মহীন পরিবারে এই মূহুর্তে হতাশা-দুশ্চিন্তা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।ঈদের সময় নতুন জামা কাপড় দুরের কথা সন্তানদের জন্য সামান্য ভাল খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন এমন আশা-ভরসাও না দেখতে পাওয়ায় রোজার দিন যত চলে যাচ্ছে ততই দুশ্চিন্তা কুঁড়ে খাচ্ছে এসব কর্মহীন পোশাক শ্রমিক পরিবারে।
গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি,টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় টিএমএস অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইলসহ একাধিক কারখানা ব্যাংকিং ও আর্থিক জটিলতার কারণে বন্ধ হয়েছে।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চাকরি করেন সুমাইয়া আক্তার বলেন,কোন কারখানা মালিক যদি জেলে থাকে এজন্য কি প্রতিষ্ঠানের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে।বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক পক্ষের এমন হীনমন্যতার জন্যই আজ আমাদের কে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,স্যার শুধু আমার না,এই গ্রুপের হাজার-হাজার শ্রমিক পরিবার এবারের ঈদে তাদের সন্তানের জন্য কোন নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারবেনা। এই কথা মনে হলেই চিন্তায় কপালে বাজপড়ে।
এ দিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ১৫৪টি। গত নভেম্বর থেকে ৩৫টি তৈরি পোশাক কারখানা কর্মীদের বেতন দিতে পারেনি,যা মোট কারখানার ২শতাংশ ডিসেম্বর থেকে ৪৫ শতাংশ কারখানায় বেতন বকেয়া পড়েছে। নানা কারণে গাজীপুরের ৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজমান। ৯ শতাংশ কারখানায় ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জটিলতা চলছে। এমন বাস্তবতায় ১ হাজার ১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়েছে ৪১টি এবং অস্থায়ীভাবে ১০টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
অপর দিকে এর মধ্যেই জানা যায়,গাজীপুরের শ্রীপুরে এসকিউ গ্রুপের এসকিউ সেলসিয়াস লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বেশকটি দাবিতে বিক্ষোভ করেন পরে এর জেরে শনিবার (১মার্চ)বিকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকদের দাবি গুলোর মধ্যে ছিলো :দুপুরের মধ্যাহ্ন বিরতি এক ঘণ্টা দিতে হবে,যেসব নিটিং অপারেটর দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরি করছেন তাদের মধ্যে থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮০ ভাগ শ্রমিককে সিনিয়র অপারেটর হিসেবে পদোন্নতি দিতে হবে, রাতে খাবার পরিবেশন না করে নগদ টাকা দিতে হবে,সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দিতে হবে,শতভাগ কোয়ালিটি ও প্রোডাকশন বোনাস দিতে হবে,উইন্ডিং মেশিন ডাবল করতে হবে,লুপ মেশিন দিতে হবে, টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধান করতে হবে, সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্ল্যানিং দিতে হবে, টাইমিং ঠিক করতে হবে, কোয়ালিটি ইনসেনটিভ, মেন্ডিং মেন ইনসেনটিভ, উইন্ডিং ইনসেনটিভ দিতে হবে, আধা বেলা ছুটি চলবে না এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ করতে হবে।
এই কারখানার শ্রমিকেরা জানান,তাদের মনে কোন শান্তি নেই,সারা দিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যা হলেই টেনশন ধরে ঈদের আগে যদি কারখানা না খুলে তাহলে কর্মহীন হয়ে কয়দিন চলতে পারবেন। ঈদের আনন্দ নিদারুণ কষ্টে পরিণত হবে।
শ্রমিকেরা আরও জানান,রোজার তৃতীয় দিন চলে যাচ্ছে। এই সময়ে কারখানা মালিকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে রাখা মানে শ্রমিকদের পেটে ভাতে তিলে-তিলে মারার পরিকল্পনা।
এসকিউ সেলসিয়াস লিমিটেডের (ইউনিট-১) মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান জয়নাল আবেদীন বলেন, সব কারখানায় কিছু দুষ্টু শ্রমিক থাকে। যারা ঈদের আগে এসব ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আন্দোলন করে থাকে। কারখানার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্বান্ত মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার নিটিং সেকশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল -২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম জানান,অযৌক্তিক আন্দোলন ও কাজ বন্ধ করার কারণে মালিকপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১৩ (১)- মতে রোববার থেকে কারখানার (নিটিং সেকশন) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।